
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে বাণীদাহ (বারোমাসিয়া) নদীতে সেতু না থাকায় যুগের পর যুগ ধরে প্রায় ১৫ টি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার। বাণীদাহ নদীটি ধরলার একটি শাখা নদী। এই নদীটির দৈর্ঘ্য শুধুমাত্র দুই কিলোমিটার। এটি ভারতের কোচবিহার জেলার দিনহাটা থানার সীমান্তবর্তি মরাকুটি গ্রাম দিয়ে বাণীদাহ বাংলাদেশের উত্তরের জেলার কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় গোরকমন্ডপ দিয়ে প্রবেশ করেছে। জানা গেছে, উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের পশ্চিমফুলমতি ইন্তুরঘাটে বাণীদাহ (বারোমাসিয়া) নদীতে এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে প্রতিবছরেই নিজেদের প্রচেষ্টায় ১১০ ফিট বাশেঁর সাকোঁ ও একই ইউনিয়নে কিশামত শিমুলবাড়ী এলাকায় নবিউলের ঘাটে ১২০ ফিট কাঠ ও বাঁশ দিয়ে সাঁকো তৈরী করে পারাপার করছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের বাণীদাহ (বারোমাসিয়া) নদীতে একই দুই সাঁকো চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে পশ্চিমফুলমতি এলাকার ইন্তুর ঘাটে বাঁশের সাঁকোটি ভেঙ্গে যাওয়ায় এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে আবারও নতুন করে ১১০ ফিট লম্বা বাঁশ দিয়ে সাঁকো তৈরী করলেও অপর দিকে কিশামত শিমুলবাড়ী এলাকায় নবিউলের ঘাটে কাঠের তৈরী রেলিং বিহীন সেতুটির একাংশ পচন ধরে ভেঙ্গে পড়েছে। ফলে চরম দুর্ভোগের শিকার ঐ এলাকার প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার মানুষ।
প্রতিদিন বোয়ালমারী, উত্তর শিমুলবাড়ী, কিশামত শিমুলবাড়ী, নাওডাঙ্গা, শালমারী, তালুক শিমুলবাড়ী, খারুয়ার চড়, গোরকমন্ডল, চর-গোরক মন্ডল, পশ্চিম ও পূর্ব ফুলমতি, ঝাউকুটিসহ প্রায় ১৫ টি গ্রামের কোমলমতি শিক্ষর্থীসহ হাজার হাজার মানুষ জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়ে ভাঙ্গা সাঁকো দিয়ে পারাপার করছে। সেই সাথে তারা জরুরী প্রয়োজনে দুইপাড়ের বাসিন্দারা ১০ থেকে ১২ কি. মি. ঘুরে বালারহাট বাজার ও ফুলবাড়ী সদরে যাতায়াত করতে হচ্ছে। ৪০ বছর ধরে সেতু নির্মানের দাবী করে আসলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন সারা পায়নি এলাকাবাসী। জরুরী চিকিৎসা সেবাসহ কৃষকদের উৎপাদিত কৃষিপণ্যও বাজারজাত করতে হয় এই সেতুর উপর দিয়ে। প্রতিনিয়ত দুই নরেবরে সাঁকো হওয়ায় অবর্ণনীয় ভোগান্তিতে পড়েছে স্থানীয়রা।
অপরদিকে উপজেলা সদরের বালাটারী গ্রাম ও ফুলসাগর আবাসন প্রকল্পের মধ্যবর্তী এলাকায় নীলকমল নদীর উপর কাঠের তৈরী রেলিং বিহীন সেতুটির একাংশ গত বর্ষায় পচন ধরে ভেঙ্গে পড়েছে। এলাকাবাসী নিজ উদ্যোগে ওই ভাঙ্গা অংশে বাঁশ বেঁধে কোন রকমে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করলেও তা মেরামতের উদ্যোগ নেয়নি কেউই। ফলে ঝুকিপুর্ন এ সেতু দিয়ে চলাচলকারী জনসাধারন ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা অহরহ দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। এই সেতু দিয়ে উপজেলার বালাটারী, মাঝিটারী, কুমারটারী, বিলুপ্ত ছিটমহলের হাবিবপুর, কামালপুরসহ পাঁচ গ্রামের ১০ হাজার বাসিন্দা উপজেলা সদরে যাতায়ত করে। তাছাড়া ফুলসাগর আবাসন প্রকল্পে বসবাসকারী তিন শতাধিক পরিবারের সদস্যদেরও চলাচলের একমাত্র রাস্তা এই সেতুটি। তাই জরুরী ভিত্তিতে সেতুটি মেরামত ও রেলিং সংযোজনের দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এই তিন বাঁশ-কাঠের সেতু ও সাঁকোসহ উপজেলায় বাঁশ-কাঠের তৈরী ৭টি ঝুঁকিপূর্ণ সাকোঁ দিয়ে কোমলমতি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ প্রায় লক্ষাধিক যুগের পর যুগ ধরে চলাচল করছে। ফলে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে প্রায় পঞ্চাশটি গ্রামের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়নের সীমান্তঘেষা কুটিচন্দ্রখানা নাখারজান এলাকায় নীলকমল নদীর উপর ৫০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৬ ফুট প্রস্থের রেলিং বিহীন কাঠের সেতু ও একই ইউনিয়নের পূর্ব কুটিচন্দ্রখানা ও সাবেক ছিটমহল হাবিবপুর এলাকায় বাঁশের ভাঙ্গা ও ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো, বড়ভিটা ইউনিয়নের বড়লই ওয়াবদাবাজার সংলগ্ন এলাকায় ৭০ ফিট লম্বা রেলিংবিহীন কাঠের সেতু ও ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের নগরাজপুর এলাকায় ১শ ফিট সেতুগুলো অবস্থিত। ফলে প্রতিদিনেই বাঁশের সাঁকো ও কাঠের সেতুগুলো রেলিং না থাকায় র্দীঘদিন ধরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীসহ প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পারাপার করছে। নষ্ট পাটাতন ও রেলিংবিহীন ঝুঁকিপূর্ণ সেতু দিয়ে পারাপারের সময় অহরহ দূঘর্টনার শিকার হচ্ছেন কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ নানা বয়সি মানুষ। এ সব ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশ-কাঠের সাঁকো ও সেতুগুলো রেলিং সংযোজনসহ দ্রুতগতিতে সংস্কারের দাবী জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
ফুলবাড়ী ইউনয়নের বালাটারী গ্রামের পরেশ চন্দ্র ও আমিনুল ইসলাম জানান, সাত বছর আগে রেলিং বিহীন কাঠের সেতু তৈরী হলেও সংস্কারের অভাবে এবারে বন্যায় তা ভেঙ্গে পড়ে। আমরা দ্রুত কাঠের সেতুটি নির্মানের দাবী জানান নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের আতাউর রহমান রতন ও শিক্ষার্থী পরিমল চন্দ্র রায় জানান, কিশামত শিমুলবাড়ী নবীউলের ঘাট ও পশ্চিম ফুলমতির ইন্তুর ঘাটে এ বানিদাহ নদীতে দ্রুত সেতুর দাবি জানান। তারা আর জানান,সেতু নির্মান হলে দুই পাড়ের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ চরম ভোগান্তি থেকে রক্ষা পাবে। এ প্রসঙ্গে
এ বিষয়ে ফুলবাড়ী সদর ইউপি চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ ও নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুসাব্বের আলী জানান, এ অঞ্চলের বাসিন্দাদের কাঠ ও বাঁশের তৈরী সাঁকো ও সেতুগুলো একমাত্র অবলম্বন। আপাতত ইউনিয়ন পরিষদে বরাদ্দ নাই। বরাদ্দ প্রাপ্তির সাথে সাথে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেতুগুলো মেরামত করা হবে। এ প্রসঙ্গে উপজেলা প্রকৌশলী মো.আসিফ ইকবাল রাজীব জানান, নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের পশ্চিম ফুলমতি কান্দাপাড়া ইন্তুর ঘাটে বারোমাসিয়া নদীর উপর ব্রীজের জন্য উদ্ধর্তন কর্তৃকপক্ষ পরিদর্শন করেছে। আশাকরি সামনের অর্থ বছরে নতুন ব্রীজের ব্যবস্থা হয়ে যাবে। বাকি গুলোর বিষয়ে উদ্ধর্তণ কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে এবং পর্যায় ক্রমে ওই সব স্থানে ব্রীজের ব্যবস্থা করা হবে।