দেশে প্রথমবারের মতো আয়োজিত গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে দেশবাসীর আগ্রহ ছিল তুঙ্গে। গত মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় ২০টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষার ‘বি’ ইউনিটের (মানবিক বিভাগ) ফল প্রকাশ করা হয়। এ ফল নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দেয়। পরে গত মঙ্গলবার রাতে নতুন করে সংশোধিত ফল প্রকাশ করা হয়। এতেও অসন্তোষ প্রকাশ করে শিক্ষার্থীরা ফল বাতিলের দাবি জানিয়েছেন।
অনেক শিক্ষার্থী বলেছেন, এমসিকিউ পরীক্ষায় অনেক শিক্ষার্থী প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিলেও তাঁদের নম্বর অনেক কম দেখানো হয়েছে। আবার অনেকে কম উত্তর দিয়েও বেশি নম্বর পেয়েছেন। অথচ ভর্তি কমিটি বলছে, কম্পিউটারের মাধ্যমে ওএমআর (অপটিক্যাল মার্ক রিডার) শিট মূল্যায়ন করা হয়েছে, তাই ভুল হওয়ার সুযোগ নেই। অনেকে হয়তো ওএমআর শিটে বৃত্ত সঠিকভাবে ভরাট করেননি। তবে শিক্ষার্থীরা বলছেন, ওএমআর পদ্ধতি নতুন কিছু নয়। এই পদ্ধতিতে পরীক্ষা দিয়ে তাঁরা অভ্যস্ত। তাই ওএমআর শিটের বৃত্ত পূরণে তাঁদের ভুল হওয়ার কথা নয়।
ফারজানা সিদ্দিকা শিমু নামের এক শিক্ষার্থীর প্রথম দফার ফলে দেখানো হয়, বাংলায় ৪০টির মধ্যে ৩৭টি প্রশ্নের উত্তর দিয়ে সঠিক হয়েছে ২২টি এবং ভুল হয়েছে ১৫টি। তিনি পেয়েছেন ১৮.২৫। ইংরেজিতে ৩৫টি প্রশ্নের মধ্যে তিনি ৩৪টির উত্তর দেন। এতে সঠিক হয়েছে ১৭টি, ভুল হয়েছে ১৭টি। নম্বর পেয়েছেন ১২.৭৫। আইসিটিতে ২৫টি প্রশ্নের মধ্যে সব কটিরই উত্তর দেন। এতে সঠিক হয়েছে ১৫টি, ভুল হয়েছে ১০টি। নম্বর পেয়েছেন ১২.৫০। তার মোট স্কোর ৪৩.৫০।
আর সংশোধিত ফলে দেখানো হয়েছে, বাংলায় তিনি ৩৯টির উত্তর দিয়েছেন। এর মধ্যে সঠিক হয়েছে ২১টি, ভুল হয়েছে ১৮টি, নম্বর পেয়েছেন ১৬.৫০। ইংরেজিতে ৩২টির উত্তর দিয়েছেন। এর মধ্যে সঠিক ১৮টি, ভুল ১৪টি, নম্বর পেয়েছেন ১৪.৫০। আইসিটিতে ২৫টির উত্তর দিয়েছেন। এর মধ্যে সঠিক ১৫টি, ভুল ১০টি, নম্বর পেয়েছেন ১২.৫০। প্রায় সব বিষয়েই গরমিল হওয়ার পরও সংশোধিত ফলে তাঁর প্রাপ্ত স্কোর একই।
ফারজানা সিদ্দিকা শিমু কালের কণ্ঠকে বলেন, তিনি বই ধরে মিলিয়ে দেখেছেন, বাংলায় তাঁর ৩২টি উত্তর সঠিক হয়েছে, ইংরেজিতে ২২টি এবং আইসিটিতে ১৭টি সঠিক হয়েছে। কিন্তু তাঁকে অনেক কম নম্বর দেওয়া হয়েছে।
ফলে গরমিলের অভিযোগ এনে গতকাল ফেসবুক লাইভে এসে ভর্তি পরীক্ষার প্রবেশপত্র পুড়িয়েছেন রংপুর লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করা মোহাম্মদ নাহিদ নামের এক শিক্ষার্থী। তিনি জানান, বাংলায় ৪০টি নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের মধ্যে ৩৪টি বৃত্ত ভরাট করলেও ফলাফলে দেখানো হয়েছে তিনি ৩৮টি বৃত্ত ভরাট করেছেন। আবার ইংরেজিতে ৩৩টি প্রশ্নের উত্তর দিলেও ২৩টি বৃত্ত ভরাট করা হয়েছে বলে ফলে দেখানো হয়েছে।
ওই শিক্ষার্থী বলেন, ‘এ রকম ফলাফলের কোনো মানে হয় না। এভাবে আমার ভবিষ্যৎ ওরা (ভর্তি আয়োজক কমিটি) পুড়িয়েছে। ভেবেছিলাম, গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা অনেক স্বচ্ছ হবে, কিন্তু প্রকৃত অর্থে কিছুই হয়নি।’
‘বি’ ইউনিটের ফল প্রকাশের পরপরই গরমিলের অভিযোগ করেছেন অনেক শিক্ষার্থী। তাঁরা বলছেন, অনেকে কম প্রশ্নের উত্তর দিয়েও বেশি নম্বর পেয়েছেন। পরীক্ষার্থীরা এই ফল বাতিলের দাবি জানিয়েছেন।
রাজধানীর দারুন্নাজাত সিদ্দিকিয়া কামিল মাদরাসার শিক্ষার্থী আবু নোমান সালমান বাংলায় ৪০টি নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের মধ্যে ওএমআর শিটে ৩৫টির বৃত্ত ভরাট করলেও ফলাফলে দেখানো হয়েছে তিনি ২০টি বৃত্ত ভরাট করেছেন তথা উত্তর দিয়েছেন। আবার ইংরেজি অংশে তিনি ১৮টি প্রশ্নের উত্তর দিলেও ফলাফলে দেখানো হয়েছে তিনি ৩০টির উত্তর দিয়েছেন।
রায়হান চৌধুরী নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, পরীক্ষা শেষে তিনি যাচাই করে দেখেছেন, ইংরেজি অংশে তাঁর মাত্র একটি প্রশ্নের উত্তর ভুল হয়েছে। অথচ ফলাফলে দেখাচ্ছে পাঁচটি ভুল হয়েছে। আবার বাংলা অংশে তিনটি ভুল হওয়ার কথা থাকলেও এখানে দেখাচ্ছে ৯টি ভুল হয়েছে