
লাভজনক খাতগুলোতে বিনিয়োগ করে বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রায় অংশ নিতে যুক্তরাজ্যের বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে ব্রিটিশ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বোত্তম সম্ভাব্য সুফলের জন্য যথেষ্ট সুযোগ দেওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি। ব্রিটিশ বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে অংশীদারিত্বে বাংলাদেশে আসার জন্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা সব সুযোগ পাবেন, কোনো বাধা থাকলে আমি তা দেখবো। তিনি বলেছেন, জ্বালানি, নবায়নযোগ্য শক্তি, জাহাজ নির্মাণ, অটোমোবাইল, হালকা প্রকৌশল, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ, সমুদ্র অর্থনীতি, পর্যটন, জ্ঞানভিত্তিক হাই-টেক শিল্প, আইসিটি খাত বিদেশি বিনিয়োগের অপেক্ষায় রয়েছে। ব্রিটিশ বিনিয়োগকারীরা এগুলোর মধ্যে যে কোনো একটি এবং এর বাইরেও যে কোনো খাত বিনিয়োগের জন্য বেছে নিতে পারেন।
লন্ডনে কুইন এলিজাবেথ সেন্টারের চার্চিল হলে বাংলাদেশ বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলন ২০২১: টেকসই প্রবৃদ্ধি অংশীদারিত্ব তৈরি ও রোড শো’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে দেওয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রিন্স চার্লস ও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের পূর্বে রেকর্ড করা ভিডিও বার্তা অনুষ্ঠানে প্রচার করা হয়। ব্রিটিশ বাণিজ্যনীতি প্রতিমন্ত্রী পেনি মর্ডান্টও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। এসময় শেখ হাসিনা একক অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রস্তাব দেন, যেখানে একটি নির্দিষ্ট দেশের কোম্পানিগুলো বিনিয়োগ করতে পারবে। যুক্তরাজ্যের বিনিয়োগকারীরা এ ধরনের অঞ্চল নিজেদের জন্য নিতে পারেন বলেও জানান তিনি। প্রায় ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং ২৮টি হাই-টেক পার্ক বিদেশি ও দেশীয় বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনসংখ্যার সুফল এবং বিনিয়োগকারীরা যাতে প্রতিযোগিতামূলক দামে দক্ষ মানবসম্পদ পায়, তা নিশ্চিতের ওপর তাদের দৃষ্টি রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অবশ্যই এ রোড শো ব্যবসা এবং বিনিয়োগ থেকে উচ্চ সুফলের পুরস্কারসহ বাংলাদেশের সম্ভাবনা প্রদর্শনের মাধ্যমে প্রেরণা জোগাবে। বাংলাদেশ আজ একটি পরিবর্তিত দেশ। গত এক দশকে আর্থ-সামাজিক খাতে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে এবং ‘রূপকল্প ২০২১’ বাস্তবায়নে সরকারের প্রচেষ্টার কারণে জাতিসংঘ বাংলাদেশকে ‘ভিশন ২০৪১’ পূরণ করে একটি উন্নত দেশ হতে এগিয়ে যাওয়া এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের যোগ্য ঘোষণা করেছে। তিনি বলেন, এডিবি আউটলুক ২০১৯ অনুযায়ী এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বাংলাদেশ সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি। বাংলাদেশের সরকারপ্রধান বলেন, বলিষ্ঠ নেতৃত্ব, সুশাসন, স্থিতিশীল সরকার, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সুষ্ঠু সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি এবং সঠিক উন্নয়ন অগ্রাধিকারের সুবাদে এ অর্জন সম্ভব হয়েছে বলে এডিবি উল্লেখ করেছে। এরইমধ্যে বাংলাদেশ পিপিপির ভিত্তিতে বিশ্বের ৩১তম বৃহত্তম অর্থনীতি। শেখ হাসিনা বলেন, দ্রুত নগরায়ন, ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের ব্যবহার, মধ্যবিত্ত ভোক্তাদের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশ সম্প্রতি বিনিয়োগের একটি আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত হয়েছে; যোগাযোগ সংযোগ বৃদ্ধি পাওয়ায় এটি দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিশাল বাজারে পরিণত হয়েছে। আমরা জ্বালানি ও বিদ্যুৎ এবং রেল যোগাযোগসহ অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যাপকভাবে বিনিয়োগ করছি।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার নিজস্ব অর্থায়নে উপেক্ষিত দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে দেশের অন্যান্য অংশের সংযোগ স্থাপনকারী রেলপথ বিশিষ্ট পদ্মাসেতু নির্মাণ করছে। বাংলাদেশ খুব শিগগিরই মেট্রোরেল যুগে প্রবেশ করছে। শেখ হাসিনা বলেন, শিল্পের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বৃদ্ধি এবং সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য বিদ্যুতের উৎপাদন এরইমধ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়েছে, ২০৩০ সাল নাগাদ এ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৪০ হাজার মেগাওয়াট, ২০৪১ সাল নাগাদ ৬০ হাজার মেগাওয়াট নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকারপ্রধান বলেন, আমরা ক্রমাগত আমাদের আইনি এবং অবকাঠামো উন্নয়ন করছি। বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে উদার বিনিয়োগ ব্যবস্থা রয়েছে এবং বিদেশি বিনিয়োগ সংসদের আইন এবং দ্বিপাক্ষিক চুক্তির দ্বারা সুরক্ষিত। তিনি বলেন, বাংলাদেশের আইসিটি খাত এখন দ্রুত বিকাশ লাভ করছে, ৬০টি দেশে এক বিলিয়ন ডলারের আইসিটি পণ্য রফতানি করছে, এটি পাঁচ গুণ বেড়ে ২০২৫ সাল নাগাদ পাঁচ বিলিয়ন ডলার দাঁড়াবে। ফ্রিলান্স আইটি প্রফেশনালদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ছয় লাখ। আইটি খাতে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ সঠিক জায়গা।শেখ হাসিনা আরও বলেন, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম আরএমজি রফতানিকারক দেশ, সবজি উৎপাদনকারী হিসাবে তৃতীয় অবস্থানে, অভ্যন্তরীণ মৎস উৎপাদনে তৃতীয়, ইন্টারনেট ফ্রিলান্সিংয়ে তৃতীয় এবং ধান উৎপাদনে রয়েছে চতুর্থ অবস্থানে।
ব্রিটিশ বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা আরও বলেন, আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই যে, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এবং বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটিসহ আমাদের সরকারি সংস্থাগুলো আপনাদের জন্য একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ ব্যবসায়িক পরিবেশ নিশ্চিত করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করবে। বাংলাদেশ সরকার ব্রিটিশ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বোত্তম সম্ভাব্য সুফলের জন্য যথেষ্ট সুযোগ দেবে। বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি প্রধান ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান সফলভাবে কাজ করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি এভাবে আরও কোম্পানিকে স্বাগত জানাতে চাই, যাতে তারা এগিয়ে আসে এবং বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে নতুন জাতির জন্মের পর থেকে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্য সর্বোত্তম সম্পর্ক উপভোগ করছে এবং প্রকৃতপক্ষে যুক্তরাজ্য যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠনে উদার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য একটি নেতৃস্থানীয় দেশ ছিল। আর এভাবে আজ যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য এবং বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিনিয়োগকারী। তিনি আরও বলেন, এরপর থেকে এ সম্পর্ক দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হচ্ছে। বাংলাদেশ বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলন দুই দেশের ব্যবসায়িক সম্পর্ককে আরও ফলপ্রসূ করে তুলবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন