
সাইফুর রহমান শামীম,, কুড়িগ্রাম।। তৃতীয় ধাপে গত রবিবার (২৮ নভেম্বর) হওয়া ইউপি নির্বাচনের চার দিন পর কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে ফলাফল ঘোষণা করেছে কমিশন। এতে আনারস প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল গফুর বিজয়ী হয়েছেন। আর আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন পেয়েছেন মাত্র ৫২৩ ভোট। এ ইউপিতে নৌকাসহ তিন চেয়ারম্যান প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (২ ডিসেম্বর) যাত্রাপুর ইউনিয়নের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. হাবিবুর রহমান এ ফলাফল ঘোষণা করেন।
গত ২৮ নভেম্বর ইউনিয়নটিতে ভোটগ্রহণ শেষে ফলাফল ঘোষণা নিয়ে একটি কেন্দ্রে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ ছাড়া ইউনিয়নের চর ভগবতীপুর এলাকার ঝুনকারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে সিল দেওয়া ব্যালট পেপারসহ নির্বাচনি সামগ্রী ছিনতাইয়ের ঘটনায় ওই ইউনিয়নের ফলাফল ঘোষণা স্থগিত রাখে নির্বাচন কর্তৃপক্ষ। ফলাফল ঘোষণার দাবিতে সংবাদ সম্মেলনও করেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। নির্বাচনের চার দিন পর বৃহস্পতিবার বিকালে ফলাফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
রিটার্নিং কর্মকর্তার ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী, বিজয়ী প্রার্থী আব্দুল গফুর আনারস প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন চার হাজার ২৩৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজামাল সরকার চার হাজার ১৮৮ ভোট পেয়েছেন। এই ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের ভরাডুবি ঘটেছে। আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. সাখাওয়াত হোসেন নৌকা প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন মাত্র ৫২৩ ভোট। নৌকা প্রতীকের এই প্রার্থীর সঙ্গে জামানত হারিয়েছেন আরও দুই প্রার্থী। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী নুর ইসলাম হাতপাখা প্রতীকে এক হাজার ১৬৪ ভোট এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী সফিকুল ইসলাম ঘোড়া প্রতীকে পেয়েছেন মাত্র ৬৪ ভোট।
নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী কোনও চেয়ারম্যান প্রার্থী মোট ভোটের এক অষ্টমাংশের কম পেলে তার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। এবারের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে যাত্রাপুরে ইউনিয়নে মোট প্রাপ্ত ভোট ১২ হাজার ৯৪টি। এর মধ্যে ত্রুটিপূর্ণ থাকায় ১১৯ ভোট বাতিল হয়েছে।
এদিকে ঘোষিত ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছেন পরাজিত স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহজামাল সরকার। তিনি বলেন, ‘এই ফলাফল আমি প্রত্যাখ্যান করলাম। ইউনিয়নের ১০টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৯টিতে ফলাফল ঘোষণা করা হলেও ঝুনকার চর কেন্দ্রের ফলাফল স্থগিত ছিল। এ বিষয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মারফত নির্বাচন কমিশন বরাবর একটি অভিযোগ দায়ের করা আছে। এ অবস্থায় ফলাফল ঘোষণা করা জনগণের ভোটাধিকারের সঙ্গে প্রতারণা।’
রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘নির্বাচনের দিন ইউনিয়নের একটি কেন্দ্র থেকে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ফলাফল ঘোষণার পর নির্বাচনি সামগ্রী ছিনতাইয়ের ঘটনায় ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা থেকে আমরা বিরত ছিলাম। পরে বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে জানিয়ে নির্দেশনা চাওয়া হয়। বৃহস্পতিবার কমিশনের নির্দেশনা হাতে পাওয়ার পর ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে রিটার্নিং কর্মকর্তা জানান, নির্বাচনি সামগ্রী ছিনতাইয়ের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট প্রিসাইডিং কর্মকর্তা বাদী হয়ে সদর থানায় মামলা করেছেন।