দৈনিক নবতান
জনতার সংসদ

BREAKING NEWS

মৌসুমী ফলের সমাহার বান্দরবানে: ক্লোড স্টোরেজ স্থাপনের দাবী স্থানীয়দের

0
সাইফুল ইসলাম: বান্দরবান জেলা প্রতিনিধি: 
পর্যাপ্ত পরিমানে মৌসুমী ফলের বাম্পার ফলন হয়েছে এবারে বান্দরবানে। অধিকাংশ ফল গুলো পচনশীল হওয়ায় দ্রুত বাজার করার কারনে চাষীগণও ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হয় এমনটা ধারনা করা যায়। এই জেলা শহরে এত বেশী মৌসুমী উৎপাদিত হয়। যা এলাকার চাহিদা মিটিয়ে সারা দেশেও ছড়িয়ে পড়ে। সঠিক পরিচর্যার অভাবে অনেক সময় ব্যবসায়ীর সস্তা দামে বিক্রি করতে দেখা যায়। ব্যবসায়ীদের মতামত জানতে চাওয়া হলে যদি কোন প্রতিষ্ঠান সমন্বিত উদ্যোগ নিয়ে একটি কোল্ড স্টোরেজ স্থাপন করতে পারত তাহলে বান্দরবানে উৎপাদিত এসব ফলমূল সারা বছরে চাহিদা মেটানো যেত।
পার্বত্য জেলা বান্দরবানের জনপদ জুড়ে এখন মৌসুমি ফলের সুবাস ছড়াচ্ছে। ফলগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রধানত আনারস, কাঁঠাল, আম ও লিচু। তবে পার্বত্যঞ্চল বান্দরবানের আমের ফলনে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও পাহাড়ের হাট-বাজারগুলোতে কাঁচা-পাকা ফলের বিপুল সমাহার। এরই মধ্যে কাঁঠাল, আনারস, লিচুতে সয়লাব হয়ে গেছে পাহাড়। প্রতিদিনই থানচি, চিম্বুক পাড়ি দিয়ে দূর পাহাড় থেকে আসছে এসব মৌসুমি ফল। ক্রেতার আকর্ষণ যেমন বেশি তেমনি ফলের দামও রয়েছে সাধ্যের মধ্যে। তবে অতি তাপদাহের কারণে আমের ফলন তেমন ভালো না হলেও কৃষি বিভাগ থেকে মাঠ পর্যায়ে পরামর্শ প্রদানের পর বাজারের আম সরবরাহ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি বিভাগ।
জানা গেছে, পার্বত্যাঞ্চলের গণ্ডি পেরিয়ে এসব মৌসুমি ফল বাজারজাত হচ্ছে রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি, চিম্বুকসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়ও। শুধু হাট-বাজারে নয়, অনলাইনও জমে উঠেছে ফলের ব্যবসা। স্থানীয় বাজার থেকে ক্রেতারা মৌসুমের ফল সংগ্রহ সরবরাহ করছেন বিভিন্ন শহরে।
স্থানীয় বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মগ বাজার, কাঁচা বাজার, ট্রাফিক মোড় ও কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন বাজারগুলোতে জমে উঠেছে মৌসুমি ফলের বেচা-কেনা। এসব ফলের বেশ চাহিদা থাকায় ক্রেতারাও দোকানগুলোতে জমাচ্ছেন ভিড়। বর্তমান বাজারে কাঠাল ১০০- ৫০ টাকা, বোম্বাই লিচু ১২০-১৫০, চায়না ৩ লিচু ২৫০ টাকা, মল্লিকা আম্রপালির কেজি ৪০ টাকা, তরমুজ প্রতি পিস ১৫০, তাল প্রতি পিস ৩০ টাকা, দেশি আম ৫০-৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চিম্বুক রোড়ের বেশ কয়েকটি এলাকা থেকে আম, আনারস, লিচু, কাঠালসহ বেশ কয়েকটি ফল স্থানীয় বাজারগুলোতে আসছে। তবে এবছর বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম থাকায় আশানুরূপ ফলন না পেলেও সন্তুষ্ট কৃষকেরা। যাতায়াতের ভালো সুবিধা থাকায় বাগান থেকে অনেক কৃষিজাত পণ্য ও ফলমূল পাইকারি বাজারে বিক্রি করা সহজ হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তথ্যমতে, বান্দরবানে গত অর্থ বছরে মোট ৯ দশমিক ৮০৯ হেক্টর জমিতে দেশীয় আম, রাঙ্গোয়ে আম্রোপালী আমের আবাদ হয়েছে। যার উৎপাদন মাত্রা ছিল ১১ হাজার ১২ শত ৭ মেট্রিক টন। চলতি অর্থ বছরের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ লক্ষ মেট্রিক টন। গত বছর আনারস আবাদ রয়েছে ৩৭ দশমিক ৯৪ হেক্টর ও উৎপাদন হয়েছে ৯৯ হাজার ৫ শত ৫৭ মেট্রিক টন। চলতি অর্থবছরে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লক্ষ মেট্রিকটন। গত অর্থ বছরে ১২ দশমিক ৯০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষাবাদ হয়েছে যার উৎপাদন ছিল ৮৪ হাজার ১৭ মেট্রিক টন। চলতি অর্থবছরে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ হাজার মেট্রিক টন। গত অর্থবছরে ২৭ দশমিক ৭৭ হেক্টর জমিতে কাঠাল চাষাবাদ করা হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে ১ লক্ষ ২০ হাজার ৫ শত ৫৬ মেট্রিক টন। চলতি অর্থবছরে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লক্ষ ২৫ হাজার মেট্রিক টন।
বান্দরবান বাজারের ফল ব্যবসায়ী মোঃ নজরুল ইসলামসহ কয়েকজন জানান, বাজারে এখন জ্যৈষ্ঠ মাসের সবগুলো ফলই তার দোকানে বিক্রির জন্য রেখেছেন। ফলের বাজারের বর্তমান দাম মোটামুটি রয়েছে। চাহিদানুসারে ক্রেতারা পছন্দের ফল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
চিম্বুক সড়কে কৃষক পারিং ম্রো বলেন, শুরুতেই বাগানের আমের মুকুল প্রচুর আসছিল। কিন্তু গরমের কারণে আমের মুকুলগুলো ঝরে পড়ে। তবে বাগানের কাঁচা আম বিক্রি করে কিছুটা লাভ করতে পারছি। ফল কিনতে আসা সৈয়দ নুর বলেন, বাজারে নতুন মৌসুমের ফল আসা শুরু করেছে। পছন্দমত ফল কিনে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছি। দাম মোটামুটি নাগালের মধ্যে রয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এস.এম শাহ নেওয়াজ জানান, চলতি অর্থবছরে প্রাকৃতিক কারণে বিশেষ করে প্রচন্ড দাবদাহ ও পানির পর্যাপ্ততা না থাকায় ফলের গাছের পরিচর্যা অনেকটা বিঘ্নিত হয়েছে। যার ফলে এ বছর মৌসুমি ফলের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রভাব পড়তে পারে। তবে অধিক ফলন উৎপাদনের জন্য মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক কৃষকদের নানা পরামর্শ প্রদান করে যাচ্ছেন।
Leave A Reply

Your email address will not be published.