দৈনিক নবতান
জনতার সংসদ

BREAKING NEWS

পাহাড় এলাকায় বৃষ্টির সাথে জুম চাষ শুরু

0
সাইফুল ইসলাম: বান্দরবান জেলা প্রতিনিধি: 
বান্দরবানের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীরদের খাদ্যের প্রধান উৎস জুম চাষ। জুম চাষ পাহাড়ীদের আদিপেশা। জুমের পাকাঁ ধানের চাউল দিয়ে চলে সারাবছরে খাদ্যের যোগান। জেলার রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি, লামা ও আলীকদমসহ ৭টি উপজেলায় বসবাসকারী জনসাধারণের সকলেই জুম চাষ করে নিজেদের খাদ্যের চাহিদার ব্যাবস্থা করে আসছে।
জেলার মারমা, চাকমা, তঞ্চঙ্গ্যা, ম্রো, খুমি, লুসাই, পাংখো, বম, চাকসহ ১১টি আদিবাসী সম্প্রদায়ের জুমের উৎপাদিত ধান থেকে বছরের ১২ মাসের মধ্যে অন্তুত ৮ মাসের খাদ্যের জোগান মজুদ করে নেয় তারা।
তাইতো প্রতিটি পাহাড়ে এখন শুরু হয়েছে জুমে ধানের বীজ বপনের উৎসব । তাই জুমচাষিদের এখন দম ফেলার ফুরসত নেই। পাহাড়ের জঙ্গল-ঝোপঝাড় পরিষ্কার পর জুমে বীজ বপনের কাজে ব্যস্ততা সময় পার করছেন জুম চাষিরা।
জানা গেছে, বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে উপযুক্ত পাহাড় নির্ধারণ করে শুরু হয় ঝোপঝাড় পরিষ্কারে কার্যক্রম। টানা কয়েকদিন ধরে পাহাড়ে জমে থাকা বিভিন্ন ঝোপঝাড় নির্দ্দিষ্ট পক্রিয়ায় পুড়িয়ে ফেলা হয়। এরপর পোড়া মাটিতে দা দিয়ে গর্ত করে একসঙ্গে ধান ও সাথীফসল হিসেবে কলা, তুলা, তিল, মারফা, কাউন, ভুট্টা, হলুদ, আদা ইত্যাদি ফসলের বীজ বপনের কার্যক্রম শুরু হয়। এরমধ্যে নানা পরিচর্যা শেষে ভাদ্র-আশ্বিন ও কার্তিক মাসে চলে জুমের সুগন্ধি পাকা ধান কাটার মহোৎসব।
বান্দরবান জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গেল বছরে ৮ হাজার ৭শত ৫৫ হেক্টর জমিতে জুমের ধানের উৎপাদন ছিল ১২ হাজার ৪শত ১০ মেট্রিক টন। চলতি বছরে বছরে জুম ধানের আবাদ ছিল ৬ হাজার হেক্টর, যার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৮ হাজার মেট্রিক টন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রুমা, রোয়াংছড়ি, থানচিসহ দুর্গম এলাকার গ্রাম গুলোতে চলছে এখন জুমের কাজে ব্যস্ততা। ভোর হলে নারী-পুরুষ এক সাথে কাধ মিলিয়ে ছুটে যাচ্ছেন জুম পাহাড়ে। সাথী হিসেবে দা,কোদাল ও মাথায় থ্রুং(বাশের তৈরী ঝুড়ি) ও ধান নিয়ে পাড়ি দিচ্ছেন উঁচু নিচু পাহাড়।
নারী পুরুষ দলবেঁধে নিচ থেকে শুরু হয় জুমের ধান বপনের কাজ। দলবেঁধে জুমের ধান বপনের কাজ। সাথে রয়েছে ভুট্টা বিজ। সারিবদ্ধভাবে একে অপরে জুমের বীজ বপন যেন একটি প্রতিযোগীতা। জুমের বীজ বপন করে যে আগে পাহাড়ের চুড়া উঠবে তিনি গাছের নীচে আরাম-আয়াসে সময় কাটাবেনন।
রুমা বটতলি গ্রামে জুম চাষি মংমেগ্য, মেনু, মেহ্লাচিং ও ক্যসাচিং সাথে কথা বলে জানা গেছে, গ্রাম থেকে কয়েক মাইল দূরে পুরো পাহাড়ে ৫-৬ আড়ি ধান লাগিয়েছেন। যার পরিমান কয়েক একর এর মতন। সাথী ফসল হিসেবে ভুট্টা, মারফাসহ আরো অনান্য ফলের বীজ লাগিয়েছেন। আবহাওয়া ঠিক থাকলে ভালো ফলন হবে বলে আশা করছেন তারা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এস এম শাহ নেওয়াজ বলেন, বান্দরবানের জুমের ধান চাষের পাশাপাশি উউচ্চ ফলনশীল আউশ ধান চাষ করা জন্য উৎসাহ দিয়ে থাকি। যার ফলে ফলন হবে দ্বিগুন। আর জুমে আদা, হলুদ, মারফা চাষ করলেও যাতে সময় মতন করে সেচ দিতে পারে সেই ব্যাপারে জুমিয়াদেরকে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। যদি আবাহাওয়া অনুকুলে থাকে তাহলে এবছরে উৎপাদনের পরিমান বাড়বে বলে আশা করা যাচ্ছে।
Leave A Reply

Your email address will not be published.