দৈনিক নবতান
জনতার সংসদ

BREAKING NEWS

পাহাড়ে উন্নয়ন সহ নিরাপত্তা ও জীবন জীবিকায় বিশেষ অবদান রাখছে সীমান্ত সড়ক

0
সাইফুল ইসলাম: বান্দরবান জেলা প্রতিনিধি:
বতর্মান সরকার পাহাড়ের গাঁ বেয়ে পার্বত্য জনপদে নির্মাণ করছে হাজার কিঃমিঃ সীমান্ত সড়ক।এক সময়ের অবহেলিত ও অনুন্নত পার্বত্য জনপদে লাগছে উন্নয়নের ছোঁয়া, তা এখন দৃশ্যমান। দূর্ঘম পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পাড়ার বাসিন্দারা এখন ভোগ করছে নাগরিক নানা সুবিধা। প্রসার হচ্ছে পর্যটন শিল্প। তাদের এ চাওয়ার মূলে আছে হাজার কিলোমিটারের বেশি দীর্ঘ একটি সীমান্ত সড়ক। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে নির্মাণাধীন এ সড়কটি রাঙামাটির দুর্গম পাহাড়ের গাঁ বেয়ে সীমান্ত ধরে এগিয়ে যাচ্ছে বান্দরবান ও কক্সবাজারের শেষ মাথা টেকনাফ পর্যন্ত।
সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা যায় পাহাড় আছে; কিন্তু তার মাথা পোড়া। পাহাড়ের চূড়ায় গাছপালা পুড়িয়ে তৈরি হয় জুম চাষের জমি। এখনও সেই ধারা অব্যাহত আছে ঠিকই; তবে অনেকটাই কমে এসেছে সেই আদি প্রচলন। কারণ, একটা সময় পাহাড়ের বেশির ভাগ মানুষ শুধু জুম চাষের ওপরই নির্ভরশীল ছিল। বতর্মানে সময় বদলের সঙ্গে সঙ্গে পাহাড়ে এখন বাণিজ্যিক ভাবেই ফলানো হচ্ছে পেঁপে, কলা, আনারস, কাঠাল কিংবা বিবিধ ফল ফলাদি ও সবজি বাগান। কয়েক বছর আগেও ক্রেতা সংকটে ফসলের ন্যায্যমূল্য পেতেন না পার্বত্য অঞ্চলের কৃষক। আবার দূরের শহরে ফল বা ফসল বেচতে যাওয়ারও উপায় ছিল না। কারণ, দুর্গম পথ বেয়ে ফলফলাদি শহরে নেয়া যেমন কষ্টের ও ঝুঁকিপূর্ণ, তেমনি সময় ও অর্থ অপচয় অবধারিত। এখন মহাজন ও বহিরাগত ব‍্যবসায়ীদের সুদের টাকার শোষণের কাহিনী কমে আসছে। তবে এমন দশা থেকে মুক্তি মেলার পথ মিলছে পাহাড়ে। সবুজ পাহাড়ের পা ছুঁয়ে, আর গা বেয়ে নির্মিত হচ্ছে ১ হাজার ৩৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত সড়ক। যার প্রথম পর্যায়ে ৩১৭ কিলোমিটারের কাজ চলছে। এর মধ্যে ১৭৩ কিলোমিটার সড়কের কাজ শেষ হয়েছে, যা এখন যান চলাচলের উপযোগী। এ সড়কের কল্যাণে পার্বত্য অঞ্চলের মানুষ নানাবিধ নাগরিক অধিকারের দাবি তুলছেন। তারা বলছেন, এখনও এখানে নেটওয়ার্কের সমস্যা আছে। এছাড়া, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংকটতো আছেই। এ দুটি বিষয়ে পদক্ষেপ নিলে এখানকার জনগোষ্ঠীর খুবই উপকার হবে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে নির্মাণাধীন এ সড়কের কারণে এরই মধ্যে ফসলের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন পার্বত্য অঞ্চলের কৃষকরা। সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বলেন, “তিন বছর আগে স্থানীয় একজন একটি পেঁপে নিয়ে যাচ্ছিলেন, দাম ছিল ৫০ টাকা। ঠিক একই জায়গায় এ বছরের শুরুতে একই পেঁপে দুটি কিনেছি ৮০ টাকা দিয়ে। সুতরাং এ একটা রাস্তা এখন তাদের আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপট কীভাবে বদলে দিয়েছে, এটা তার একটা উদাহরণ”। কর্মকর্তারা বলছেন, “২০২৪ সালের মধ্যে ৩১৭ কিলোমিটার সড়কই দৃশ্যমান হবে। বাকি ৭১৯ কিলোমিটার সড়ক তৈরি হবে আগামী ১০ বছরের মধ্যে”। সড়কটির এক প্রান্তে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত, আর অন্য প্রান্তে থাকবে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত।
দুঃখজনক হলেও সত‍্য যে বর্তমানে কুকি চিন ন‍্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) উক্ত সীমান্ত সড়ক নির্মাণ কাজে বাধা দিচ্ছে, সড়কের শ্রমিকদের অপহরণ, হত্যা ও গণহারে চাদাঁবাজিসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করছে। এমনকি দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে হামলাসহ হত্যা করছে। ফলে পাহাড়ের পরিবেশ অশান্ত হচ্ছে। এমতাবস্থায়, কেএনএফ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ও গণ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এই সীমান্ত সড়ক দেশী বিদেশী পর্যটকদের আকৃষ্ট করবে। সেই সাথে উৎপাদিত কৃষিপণ‍্য বাজারজাত সহ দেশের নিরাপত্তা, অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য অবদান রাখবে।
Leave A Reply

Your email address will not be published.