জহিরুল ইসলাম মিলন (ধনবাড়ী) টাঙ্গাইল
টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার বংশাই, ঝিনাই , বৈরান সহ সব নদ-নদী ও খালে চলছে চায়না ও দুয়ারী জাল দিয়ে মাছের বংশ নির্মূলের মহোৎসব। মৎস্য সম্পদ ধ্বংসের এই যজ্ঞে প্রকাশ্যে কাজ করছে নদী, খাল বিলপাড়ের হাজারো মানুষ।
তা যেন দেখার কেউ নেই।
ধনবাড়ীর বিস্তীর্ণ খাল বিল পাড়ের মৎস্যজীবী মানুষের বেশির ভাগই এখন ব্যবহার করছে নিষিদ্ধ চায়না জাল ও চায়না দুয়ারী।
প্রকাশ্যেই তারা এসব উপকরণ দিয়ে ছোট-বড় সব ধরনের মাছ ধরে নিঃশেষ করে দিচ্ছে মৎস্য ভাণ্ডার। ফলে প্রতিবছরই কমে আসছে মাছের পরিমাণ।
এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আর এসব নদী থেকে মাছ আহরণ করতে পারবে না বলে শঙ্কা স্থানীয়দের। তাদের দাবি চায়না জাল ও দুয়ারী উৎপাদন যেন বন্ধ করা হয়, এসব উপকরণের সহজ লভ্যতার কারণেই জেলেরা উৎসাহিত হচ্ছে ব্যবহারে।
সরেজমিনে ধনবাড়ী উপজেলার বংশাই, ঝিনাই, বৈরান সহ বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন বিল অঞ্চলে গিয়ে দেখা যায়, যমুনার সংযোগ খালগুলোতে চায়না দুয়ারী পেতে রাখা হয়েছে। ভোর রাত থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত জালে আটকে থাকা মাছগুলো তুলছে জেলেরা।
কথা হয় জেলেদের সঙ্গে। নিষিদ্ধ এসব উপকরণ দিয়ে মাছ শিকার আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ জেনেও জীবিকার অজুহাতে তারা এসব করছেন বলে স্বীকার করেন। তাদের দাবি বর্ষা মৌসুমে তাদের জন্য বিকল্প পেশার ব্যবস্থা বা প্রণোদনার।
কোথাও কোথাও নদীগুলোতে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে মাছ শিকার করা হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, চায়না দুয়ারী দিয়ে মাছ শিকার করায় অনেক ক্ষতি হচ্ছে। এই জাল দিয়ে মাছ শিকার করলে সব ধরনের মাছ জালে আটকে পড়ে। ছোট বড় সব ধরনের মাছ আটকে যায়। ভবিষ্যতে দেশীয় মাছ আর পাওয়া যাবে না।
তারা আরও বলেন, জেলেরা পেটের দায়ে এই জাল দিয়ে মার মারছে, কিন্তু কিছুদিন পরেই দেশীয় মাছের সংকট দেখা দেবে। এই জাল যেখানে তৈরি ও বিক্রি করা হয় সেখানে অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দিতে হবে। জাল না পেলে জেলেরাও মাছ শিকার করতে পারবে না। আগে যেভাবে অন্য জাল দিয়ে মাছ শিকার করতো, সেই জাল দিয়ে শিকার করলে এই ধরনের ক্ষতি হবে না।
ধনবাড়ী উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তার নিষিদ্ধ চায়না জালের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর কথা থাকলেও সে অভিযান পরিচালনা করেনি বলে জানান স্থানীয়রা।
স্থানীয় জেলেরা জানান, মানুষের মাঝে সচেতনা বৃদ্ধি ও চায়না জাল দিয়ে মাছ ধরা নিরুৎসাহিত করতে পারলেই দেশীয় মাছের প্রজনন রক্ষা করা সম্ভব। বাজারেও দেদার বিক্রি হচ্ছে শোল, টাকি ও গজারের পোনা। মাছের পোনা খেতে সুস্বাদু বলে সবারই এ পোনা মাছের প্রতি আকর্ষণ বেশি।
স্থানীয়রা জানান, প্রশাসন ও মৎস্য কর্মকর্তার সক্রিয় ভূমিকার মাধ্যমেই সম্ভব মা মাছ ধরা থেকে তাদের নিরুৎসাহিত করা। মা মাছ এসব চায়না জাল দিয়ে নিধন করলে দেশীয় প্রজাতির মাছ বিলীন হয়ে যাবে।
ধনবাড়ী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃআসলাম হোসাইন”কে বলেন, এ জাল ব্যবহার নিষিদ্ধ। নদীতে এ জাল পাতা হলে মাছের পাশাপাশি মাছের পোনা, এমনকি মাছের ডিমও জালে আটকা পরে। বাজারে বিক্রি হবে না এমন মাছও ধরা পরে। সেগুলো ফেলে দেওয়া হয় এবং অধিকাংশই মারা যায়। এরমধ্যে অনেক বিপন্ন প্রজাতির মাছও থাকে । দেখি আমি উপজেলা মৎস কর্মকর্তাকে বিষয়টিকে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলবো।