দৈনিক নবতান
জনতার সংসদ

BREAKING NEWS

কুরআন-হাদীসের আলোকে ভূমিকম্পের কারণ

0

Muhammad Alaminকুরআন-হাদীসের আলোকে ভূমিকম্পের কারণ ইদানীং মাঝে মাঝেই পৃথিবীটা কেঁপে উঠছে। এই কেঁপে ওঠার তালিকা থেকে বাদ যায়নি আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশও। তারই ধারাবাহিকতায় আজকেও বাদ মাগরিব বাংলার সবুজ ভূমিও প্রকম্পিত হচ্ছে । আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির।

 

এখন প্রশ্ন হলো, ভূমিকম্প কেন হয়? এর থেকে কিভাবে পরিত্রাণ পাওয়া যায়? এ ব্যাপারে আমাদের করণীয়-ই বা কি? বক্ষমান নিবন্ধটি অনুসন্ধিৎসু হৃদয়ের এ প্রশ্নত্রয়েরই একটি সংক্ষিপ্ত উত্তর। ভূমিকম্প কেন হয়? ভূমিকম্পসহ পৃথিবীর নানা বিপর্যয়ের মূল কারণ হলো মানুষের পাপাচার। মহান আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন, অর্থ : স্থলে ও জলে মানুষের কৃতকর্মের দরুণ বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে।

 

(সূরা রুম’- ৪১) অন্যত্র ইরশাদ করেন, অর্থ : তোমাদের উপর যেসব বিপদ-আপদ পতিত হয়, তা তোমাদের কর্মেরই ফল এবং তিনি তোমাদের অনেক গুনাহ ক্ষমা করে দেন। (সূরা শুরা- ৩০) হাকীমুল উম্মত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী রহ. ভূমিকম্পের কারণ বর্ণনা প্রসঙ্গে লিখেছেন, ইবনু আবিদ্ দুনয়া বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযি. এর নিকট ভূমিকম্পের কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলো।

 

উত্তরে তিনি বললেন, যখন মানুষ বৈধ কাজের ন্যায় নির্ভীকভাবে ব্যভিচার করে, মদ পান করে এবং বাদ্য বাজায়, তখন আসমানে আল্লাহ তা‘আলার আত্মমর্যাদায় বাঁধে, তখন তিনি যমীনকে নির্দেশ দেন যে, তাদেরকে প্রকম্পিত করো। (হাকীমুল হযরত আশরাফ আলী থানবী, ইসলাহী নেসাব [জাযাউল আ‘মাল]; পৃষ্ঠা ২৯৯) হযরত সফিয়্যা রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রাযি. এর খেলাফত কালে একবার মদীনায় ভূমিকম্প শুরু হলো।

 

এমনকি খাটগুলোও নড়তে লাগলো। …অতঃপর উমর রাযি. লোকদের সামনে ভাষণ দিলেন এবং বললেন, নিশ্চয়ই এই ভূমিকম্প তোমরাই সংঘটিত করেছো (তোমাদের কৃতকর্মের কারণে হয়েছে)। তোমরা ভূমিকম্পকে ত্বরান্বিত করেছো। আবার যদি মদীনায় ভূমিকম্প হয় তাহলে আমি তোমাদের ছেড়ে চলে যাবো। (সুনানে কুবরা বাইহাকী; হা.নং ৬৬০৪, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা; হা.নং ৮৪২১, বর্ণনাটির সনদ সহীহ)।

 

কোনো কোনো বর্ণনায় আছে, হযরত উমর রাযি. বলেছেন, আবার যদি ভূমিকম্প হয় তাহলে আমাকে আর মদীনায় পাবে না। হযরত কাতাদা রহ. সূরা বনী ইসরাঈল-এর ৫৯ নং আয়াত وَمَا نُرْسِلُ بِالْآيَاتِ إِلَّا تَخْوِيفًا (অর্থ) আমি ভীতি প্রদর্শনের জন্যই নিদর্শনসমূহ প্রেরণ করে থাকি- এর তাফসীর প্রসঙ্গে বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা যা দ্বারা ইচ্ছে করেন বান্দাকে ভয় দেখান, যাতে তারা সতর্ক হয়, উপদেশ গ্রহণ করে এবং ফিরে আসে।

 

…হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি. কুফায় থাকাকালীন একবার সেখানে ভূমিকম্প হলো। তখন তিনি বললেন, হে লোক সকল! নিশ্চয়ই তোমাদের রব চাচ্ছেন যে, তোমরা বিশুদ্ধ তওবার মাধ্যমে তাঁকে সন্তুষ্ট কর, সুতরাং আল্লাহ তা‘আলাকে খুশি করার লক্ষ্যে তোমরা খালেস তওবা করে নাও। (জামিউল বয়ান লিআবি জা‘ফর আতত্ববারী ৯/২০১) ভূমিকম্প ইত্যাদির কারণ সম্পর্কে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, মানুষ যখন গনীমতকে নিজের সম্পদ মনে করবে (রাষ্ট্রের সম্পদকে কুক্ষিগত করবে), আমানতকে গনীমত মনে করবে, যাকাতকে ঋণ মনে করবে, দুনিয়ার জন্য ইলম শিখবে, পুরুষ তার বিবির অনুগত ও মায়ের অবাধ্য হবে, বন্ধুকে কাছে টানবে আর পিতাকে দূরে ঠেলে দেবে, মসজিদ সমূহে আওয়াজ অনেক জোরে জোরে হবে, ফাসেকরা গোত্রের নেতৃত্ব দেবে,

 

সর্বনিকৃষ্ট ব্যক্তি জাতির প্রধান হবে, মানুষ কারো অনিষ্ট থেকে বাঁচার জন্য তাকে সম্মান করবে, গান-বাদ্য ব্যাপক হবে, মদ পান করা হবে, এই উম্মতের শেষভাগ প্রথমাংশকে অভিশাপ দেবে তখন তুমি প্রচণ্ড ঝঞ্ঝা বায়ূ, ভূমিধস, ভূমিকম্প, বিকৃতি, প্রস্তর বর্ষণ এবং ছিন্ন মালার দানার ন্যায় কিয়ামতের নিদর্শনাবলী অনবরত প্রকাশিত হওয়ার অপেক্ষা করো।

 

(সূনানে তিরমিযী; হা.নং ২২১১) এ প্রসঙ্গে হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত কিয়ামত কায়েম হবে না যতক্ষণ না ইলম উঠে যাবে, যামানা কাছাকাছি হয়ে যাবে (এক বছরকে এক মাসের মতো মনে হবে), অধিক হারে ভূমিকম্প হবে, ফিতনা ছড়িয়ে পড়বে এবং খুন-খারাবী বেড়ে যাবে।

 

(সহীহ বুখারী; হা.নং ৬৭০৪) উপরোক্ত আয়াত, হাদীস ও সাহাবায়ে কেরামের উক্তি দ্বারা সুষ্পষ্টরূপে বুঝে আসে যে, মানুষের গুনাহই হলো ভূমিকম্প সংঘটিত হওয়ার প্রধান কারণ এবং ভূমিকম্প কিয়ামতের একটি অন্যতম নিদর্শন।

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.