দৈনিক নবতান
জনতার সংসদ

BREAKING NEWS

গভীর রাতে কেন পদ্মা সেতু থেকে লাফ দিলেন, যা বললেন অটোরিকশা চালক

0
আশরাফুল ইসলাম

চলতি বছরের ১৮ জুন নিরাপত্তাকর্মীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে মধ্যরাতে উল্টো পথে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চালিয়ে পদ্মা সেতুতে উঠে পড়ে ধরা পড়ার ভয়ে মাঝ পথে সেতুর উপর থেকে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে নিখোঁজ হন অটোরিকশা চালক শরীফুল। এদিকে ঘটনার প্রায় সাড়ে ৩ মাস পর রবিবার (১ অক্টোবর) সকালে হঠাৎ মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ে পদ্মা সেতুর উত্তর থানায় হাজির দীর্ঘদিন ধরে নিখোঁজ থাকা সেই অটোরিকশা চালক শরিফুল।

তাকে দেখার পর তার কথা শুনে প্রথমে পুলিশ কর্মকর্তারা কিছুটা বিভ্রান্ত হলেও তার দেয়া তথ্য ও বর্ণনা অনুযায়ী ব্যাটারি চালিত অটোরিকশাটির মিল খুঁজে পাওয়ায় নিশ্চিত হয় তিনিই নিখোঁজ সেই ব্যক্তি।

এ বিষয়ে অটোরিকশা চালক শরিফুল জানান, কিস্তির টাকায় অটোরিকশা কিনেছিলেন। পরিবারের লোকজন তার কথা বিশ্বাস করেননি সে সেতু থেকে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। তার পরিবারের সদস্যরা মনে করেছিলেন অটোরিকশা বিক্রি করে টাকা খেয়ে ফেলেছেন তিনি। তাই স্ত্রী-পরিবারের কাছে তার ঘটনার সত্যতা প্রমাণ করতে সেতুতে ফেলে রেখে যাওয়া অটোরিকশা কোন থানায় আছে খোঁজ নেয়া শুরু করেন। অবশেষে জানতে পারেন সেটি পদ্মা সেতু উত্তর থানায় পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। তাই দেরি না করে ৩ মাস ১০ দিন পর উত্তর থানায় এসে নিজের অটোরিকশাটি ফিরিয়ে দেয়ার দাবি করেন তিনি। পরিবারের কাছে প্রমাণ করতে চান তিনি অটোরিকশা বিক্রি করেননি, তিনি ভুলবশত এমন পরিস্থিতির স্বীকার হয়েছেন।

পদ্মা সেতুর উত্তর থানা কর্তৃপক্ষ জানায়, দীর্ঘদিন নিখোঁজ থাকার পর অবশেষে সন্ধান মিলেছে সেই অটোরিকশা চালকের। বেঁচে আছেন তিনি। তার নাম শরিফুল ইসলাম। তিনি বাগেরহাট জেলার মোল্লাহাটের উদয়পুর অরুনকান্দি গ্রামের জিন্নাত আলীর ছেলে। সকালে পদ্মা সেতু উত্তর থানা উপস্থিত হয়েছেন তিনি দাবি করেন ফেলা যাওয়া অটোরিকশাটির তার।

এ ঘটনা সত্যতা নিশ্চিত করে পদ্মা সেতু উত্তর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো.আলমগীর হোসাইন বলেন, সকাল ৯টার দিকে থানায় এসে তার পরিচয় দেয় শরিফুল। পরে দাবি করেন ফেলা যাওয়া অটোরিকশাটি নিতে আসছে। এছাড়াও পদ্মা সেতু থেকে গভীর রাতে ভয়ে লাফ দেয়ার কথা স্বীকার করে ওই দিনের ঘটনার বর্ণনা দেন অটো রিক্সা চালক শরিফুল। তারপর তিনি পুলিশ সদস্যদের বলেন, অটো রিকশাটি ফেরত নিতে এসেছেন তিনি। এ সময় শরিফুলের সাথে তার শ্বশুর দাউদ মোল্লাও ছিলেন।

তিনি আরও জানান, আমরা ঘটনা সংশ্লিষ্ট সিসিটিভির ফুটেজ দেখছি এবং ঘটনার বিবরণ নিচ্ছি। দাবিকৃত অটোরিকশাটি শরিফুলের তার বর্ণনা অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে প্রমাণ মিলেছে। পরে সেতু কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পদ্মা সেতুর উত্তর ও দক্ষিণ থানার আইনগত প্রক্রিয়া শেষে অটোরিকশাটি তাকে বুঝিয়ে দেয়া হবে।

এদিকে রিকশা চালক শরিফুল ইসলাম আরও জানান, আমি ঢাকার হাজারিবাগ ২/৩ বছর অটোরিকশা চালিয়েছি। পরে সিদ্ধান্ত নেই আমার গ্রামের বাড়ি গিয়ে অটোরিকশা চালাবো। ওইদিন গভীর রাতে পদ্মা সেতু দিয়ে ভুলবশত উল্টাপথে রিকশা চালিয়ে যাওয়ার সময় কিছুলোক আমাকে ধাওয়া করে। এক পর্যায়ে ট্রাকের সঙ্গে আমার রিকশাটির ধাক্কা লেগে পড়ে যাই। পরে ওই লোকগুলো কাছাকাছি আসলে আমি ভয়ে পদ্মা নদীতে লাফ দেই। পরে রাতভর সাঁতার কেটে ভোরের দিকে একটা চরে উঠি। তারপর কিছুদিন অসুস্থ হয়ে খুলনা হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম।

তিনি আরও জানান, এখন আসছি রিকশাটি নিতে। আমাকে রিকশাটি বুঝিয়ে দিলেই আমি চলে যাবো। এটি আমার জীবিকা অর্জনের একমাত্র শেষ অবলম্বন।

উল্লেখ্য, গত ১৮ জুন দিবাগত রাত ২টার দিকে শরীয়তপুরে জাজিরা প্রান্ত হয়ে উল্টোপথে সেতুতে উঠে পড়ে অটোরিকশা চালক শরিফুল। বিষয়টি টের পেয়ে সেতুর নিরাপত্তারক্ষীরা তাকে ধাওয়া করেন। পরে সেতুর ২১নং পিয়ারের কাছে এসে ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কা লেগে অটোরিশাটি উল্টে যায়।

পরে সেতুর উপরে থাকা নিরাপত্তা কর্মীদের ধাওয়া খেয়ে সেতু থেকে ঝাঁপ দিয়ে নদীতে পড়ে নিখোঁজ হয় শরিফুল। এরপর দিন সকাল থেকে কোস্টগার্ড, নৌ-পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের যৌথভাবে টানা কয়েকদিনের উদ্ধার অভিযানেও খোঁজ মেলেনি তার।

এতে উদ্ধারকর্মী ও সংশ্লিষ্টরা ভেবেছিলেন পানি স্রোতে ডুবে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন শরিফুল। পরে আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্ত ঘোষণা করা হয় উদ্ধার অভিযান। তবে তিনি সাঁতরে তীরে উঠে বাড়ি চলে গিয়েছিলেন। বেঁচে আছেন। এতো দিন ছিলেন অগোচরে এটি ভাবতেও পারিনি কেউ।

Leave A Reply

Your email address will not be published.