মো. সেলিম হোসেন, গোপালপুর-টাঙ্গাইল:
গোপালপুরে বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা আনসার-ভিডিপির সদস্যরা বরাদ্দকৃত সরকারি ভাতা এখনো পাননি বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে ভাতা বঞ্চিত সদস্যদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। জানা যায়, উপজেলার নগদাশিমলা, ঝাওয়াইল ও হেমনগর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন হয় ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। ওই নির্বাচনে অস্ত্রধারী ও অস্ত্রবিহীন ৬৪৬ জন আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করেন।
এতে আনসার ও ভিডিপি সদস্যরা দুই মাস ধরে রাষ্ট্রীয় মাসিক ভাতা নিয়মিত পাচ্ছেন না। বর্তমানে একজন ইউনিয়ন কমান্ডার মাসিক ১ হাজার ২০০ টাকা এবং একজন ইউনিয়ন সহকারী প্লাটুন কমান্ডার ১ হাজার টাকা ভাতা পেয়ে থাকেন।
অস্ত্রধারী আনসার সদস্য আলামিন মিয়া জানান, একজন আনসার সদস্যকে নির্বাচনে টানা তিন দিন ডিউটি করতে হয়। এ জন্য অস্ত্রধারী আনসারকে ২ হাজার ৪৯০ টাকা এবং অস্ত্রবিহীন আনসারকে ২ হাজার ১৯০ টাকা সরকারি ভাতা দেওয়ার কথা। ডিউটিতে যাওয়ার আগেই উপজেলা আনসার ও ভিডিপি অফিস ইউনিয়ন কমান্ডারের মাধ্যমে রাহা খরচ বাবদ প্রতি আনসারের নিকট থেকে ৫০০ টাকা করে অগ্রিম বখরা আদায় করে। নির্বাচনী দায়িত্ব পালন শেষে ভাতার টাকা পেতে এক বছর ধরে তারা অপেক্ষা করছেন।
আনসার সদস্য তরিকুল জানান, কামলা দিলেও মজুরি মিলে কমপক্ষে ২১শ টাকা। আর টানা তিন দিন ঝামেলাপ‚র্ণ নির্বাচনী কাজে অনেক ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হয়। এমতাবস্থায় আনসার-ভিডিপি অফিসে ঘুষসহ সকল প্রকার খরচাপাতি বাদে বরাদ্দকৃত ভাতার টাকা থেকে অবশেষে জুটবে বড় জোর ৭শ-৮শ টাকা। সেই টাকা পেতে এক বছর ধরে অফিসে ঘুরতে ঘুরতে চরম হয়রানি হচ্ছেন তারা।
আনসার সদস্য হৃদয় শেখ বলেন, জেলা আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর অফিস নাকি ঢাকা নির্বাচন অফিসে অনুদানের টাকা চেয়ে একটি চিঠি লিখেছিল ৬ মাস আগে। সেই চিঠি নাকি ঢাকা নির্বাচন কমিশন অফিসে যথা সময়ে পৌঁছেনি। তাই ভাতার টাকা নাকি মিলছে না। আমাদের চিঠি কেন দেরিতে যায়, আমাদের চিঠির কেন গুরুত্ব নেই, তা বুঝতে পারছি না।
গোপালপুর উপজেলা আনসার-ভিডিপি কমান্ডার ইয়াকুব আলী জানান, ভাতার দাবিতে প্রায়ই আনসার সদস্যরা অফিসে আসেন। তাদেরকে বুঝানো হয় যে, নির্বাচন কমিশন বরাদ্দ না দেওয়ায় ভাতার টাকা তাদের দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। নির্বাচনের আগে অফিস থেকে কেউ রাহা খরচ আদায় করেন বলে তার জানা নেই। এটি অপপ্রচার।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসফিয়া সিরাত জানান, দরিদ্র আনসার সদস্যরা এতো দিনেও নির্বাচনী ভাতার টাকা না পাওয়া দুঃখজনক। তারা যাতে দ্রæত ভাতার টাকা পেয়ে যান, সেজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অফিসিয়ালি যোগাযোগ করা হবে।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মতিউর রহমান জানান, আনসার-ভিডিপি সদস্যদের সরকারি ভাতা না পাওয়ার ক্ষেত্রে তার করার কিছুই নেই। কারণ আনসার সদস্য ছাড়া নির্বাচনে যারা দায়িত্ব পালন করেন তাদের সকলের ভাতার ব্যবস্থা করে থাকে জেলা নির্বাচন অফিস। কিন্তু নির্বাচন কমিশন আনসার সদস্যদের ভাতা বরাদ্দ দেন আনসার-ভিডিপি কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে। তাই আনসার সদস্যদের ভাতা কেন বকেয়া রয়েছে অথবা কেন তারা যথাসময়ে ভাতা পাচ্ছেন না সেটা ভালো বলতে পারবে সংশ্লিষ্ট জেলা আনসার অফিস।
