সাইফুল ইসলাম: বান্দরবান জেলা প্রতিনিধি:
বান্দরবান জেলা সদর থেকে ১৩ কিলোমিটার দুরে চিম্বুক পাহাড়ের পাদদেশে সুয়ালক ইউনিয়নের বসন্ত ম্রো পাড়ার স্থানীয় বাসিন্দা তোয়ো ম্রো।
নিজের প্রচেষ্টায় গড়ে তুলেছেন ২০ একর জায়গার উপর দেশী-বিদেশী প্রায় ৮০ প্রজাতির মিশ্র ফলের বাগান। তার মিশ্র ফলের বাগানে থোকায় থোকায় ঝুলে আছে লাল-হলুদ রঙের গাছভর্তি বাউকুল,কাশ্মিরী কুল,এছাড়াও আছে ভিয়েতনামী নারিকেল,মিষ্টি সফেদা,দার্জিলিং কমলা,চায়না কমলা,মল্লিকা আম,সূর্যডিম আম,চ্যাংনাই আম,জাপানী আম, লংকান গাছ(আঁশ ফল গাছ) ভিয়েতনামী বারোমাসী মাল্টা,ড্রাগণ,আলু বকরা,কাতিমন আম, রেডকুইন আম, রবি লংগান (লাল) লাল কাঠাল, শান্তল,সরিফা,বিলাতী কাব, সীডলেজ কুল,হানি ভিউ আমসহ ৮০ প্রজাতির দেশী-বিদেশী বিভিন্ন ফলের গাছ। তিনি জানান এই বাগান থেকে প্রতিবছর সব খরচ বাদে কমপক্ষে ২০ লক্ষ টাকা আয় করেন।
তিনি শুধু নিজেই ফলদ বাগান করে স্বাবলম্বী হননি, নিজের গ্রামের জুম চাষের বদলে ম্রো জনগোষ্ঠীকে বাগান চাষে উদ্বুদ্ধ করেছেন নিজের বাগান থেকে প্রতিবছর বিনামূল্যে বিভিন্ন ফলদ চারা সরবরাহ করেছেন, আবার চারা রোপন থেকে পরিচর্চা কিভাবে করতে হবে নিজের অর্থায়নে আগ্রহী চাষীদেরকে বিনামূল্যে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। এলাকাবাসী সেজন্য তাকে নাম দিয়েছে” ড্রাগণ মাষ্টার তোয়ো ম্রো”
তিনি ২০২৩ সালে বঙ্গবন্ধু কৃষিপদক পেয়েছেন এছাড়াও বিভিন্ন মিডিয়া ও সামাজিক সংগঠন থেকে ক্রেস্ট ও পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে তাকে,এছাড়া বিভিন্ন কৃষি পদকে ভুষিত হয়েছেন তিনি। ২০০৫ সালে কৃষি বিভাগের সহযোগীতায় ও অনুপ্রেরণায় বাগান চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন এর আগে জুম চাষ করলেও দিন দিন জুমের জায়গা সংকুচিত হওয়ার কারনে ম্রো জনগোষ্ঠীকে স্থায়ীভাবে বিভিন্ন ফলদবাগান চাষে ঝুঁকতে হচ্ছে।
তার বাগানে এখন সারা বছর কোননাকোন ফল থাকে।বাগানের চারাগাছে জৈব সার প্রয়োগের জন্য এ বছর আড়াই লক্ষ টাকার গোবর সার ক্রয় করেছেন, বাগানের পরিচর্চার জন্য শ্রমিকের বেতনসহ আনুষঙ্গিক খরচ বাদ দিয়ে প্রতিবছর ২০লাখ টাকার মতো লাভ হয়।
বসন্ত পাড়ার রুইতন ম্রো (৩২) ৮ বছর আগে তোয়ো ম্রো”র পরামর্শে বাড়ী চারপাশপ প্রায় ৫শ আম গাছের কলম চারা লাগান,২ বছরের মধ্যে ফলন এসেছিল। এখন প্রতিবছর আড়াই লক্ষ থেকে তিন লক্ষটাকার আম বিক্রি করছেন তিনি। তার বাগানেও আপেল কুল, সজিনা চারা লাগিয়েছেন এখন আগের তুলনায় আর্থিকভাবে লাভবান হওয়াতে তিন ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে নিতে তার কোন সমস্যা হচ্ছেনা সেজন্য ড্রাগণ মাষ্টার তোয়ো ম্রো ও কৃষি বিভাগের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন তিনি।
তোয়ো ম্রো প্রায় সময় লামা,রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলায় গিয়ে দুর্গম এলাকার ম্রো গ্রামে গ্রামে ফলদ বাগান চাষ করার জন্য উঠান বৈঠক করে ফলদ বাগান করতে উদ্বুদ্ধ করেন।
বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ এম এম শাহ্ নেওয়াজ বলেন বান্দরবান জেলায় অনেক সফল ফলদ বাগান চাষী আছেন যারা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পরিচর্চা ও চাষাবাদ করে সফল হয়ে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন,তার মধ্যে তোয়ো ম্রো একজন।তিনি গতবছর ২০২৩ সালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষিপদক পেয়েছিলেন। তিনি মিশ্রফলদ বাগান করে সফল হয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে কাজ করতে করতে অভিজ্ঞ হওয়াতে তার আশে-পাশে অন্যান্য বাগানচাষীদেরকেও তার বাগান থেকে বিনামূল্যে চারা প্রদান ও পরামর্শসহ সার্বিক সহযোগীতা করে যাচ্ছেন।