দৈনিক নবতান
জনতার সংসদ

BREAKING NEWS

হেডম্যান অংসাথুই মারমার বিরুদ্ধে মৌজাবাসীদের অভিযোগ

0

সাইফুল ইসলাম: বান্দরবান জেলা প্রতিনিধি:
বান্দরবানের থানচি উপজেলার ৩৬৮ নং মিবক্যা মৌজা হেডম্যান অংসাথুই মারমা বিরুদ্ধের নানান অপকর্মের অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগকারীদের থেকে জানা যায়, আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে বান্দরবানে থানচি উপজেলা ৩৬৮ নং মিবক্যা মৌজা হেডম্যান অংসাথুই মারমা ক্ষমতার অপব্যবহার, মৌজাবাসীদের বেপরোয়ার আচরণ, অত্যাচার, সালিশ বিচারের নামে জুম চাষের এরিয়া (জায়গা) নিয়ে গ্রুপিং সৃস্টি, একাধিক ব্যক্তিকে একই জমি বরাদ্দ, পাড়ার কারবাড়ি নিয়োগের একাধিক ব্যক্তির নিকট অর্থ আদায়সহ নানান অপকর্মের সাথে নিজে জড়িত থেকে তার অনুসারীদের মাধ্যমে এইসব কর্মকাণ্ড করে আসছে গত ১৭ বছর ধরে।
একাধিক ব্যক্তিকে নিয়োগ বাণিজ্যসহ হেডম্যানের অপকর্মে উপর সুস্থ তদন্ত, যথাযথ শাস্তি ব্যবস্থা গ্রহণ করা ও হেডম্যানের পদ থেকে অব্যাহতি ও প্রতিকার চেয়ে বান্দরবান জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দিয়েছে ১৩ গ্রামে কারবারি (পাড়ার প্রধান) ও ১৮ জন ভুক্তভোগী সাধারণ মৌজাবাসী। অভিযোগকারীদের মধ্যে কয়েকজন সাবেক উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদে মেম্বারও রয়েছে।
অভিযোগ আমলে নিয়ে জেলার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ডিসেম্বর মাসের যথাযথ সুস্থ তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল ও ৩৬৮ নং মিবক্যা মৌজা ছাংওডং পাড়া ৫ ম্রো সম্প্রদায় সাথে ১১ মারমা পরিবারের নতুন পাড়ার স্থাপনের ঘরবাড়ির নির্মাণের সংঘর্ষ ঘটনা কেন্দ্র করে স্থিতিশীলতা বজায় রাখাতে থানচি থানাকে চিঠি দিয়েছে।
থানচি থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মো. জসিম উদ্দিন একই থানা উপসহকারী পরিদর্শক এসআই মো. আলমগীর হোসেনকে তদন্তভার নিয়োগ করে সরেজমিনের প্রতিবেদন প্রদানের (আইও) নিয়োগ করেন।
আলমগীর হোসেন জানান, পাহাড় পর্বত থাকায় ঘটনাস্থলে যাওয়ার সম্ভব হয়নি অভিযোগকারী ও অভিযুক্তদের আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি তারিখের আদালতে হাজির হওয়ার জন্য নোটিশ দিয়েছি কিন্তু ঘরবাড়ি নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার সম্ভব হয়নি।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ছাংওডং পাড়ার বাসিন্দা তর্জ ম্রো বলেন, আমরা ম্রো সম্প্রদায় ৫ পরিবারকে আমাদের অংসাথুই হেডম্যানের বড় ভাইয়ের বন্দোবস্তকৃত জায়গায় নতুন ঘরবাড়ি নির্মাণ করে নতুন পাড়া স্থাপনের কথা বললে গত ডিসেম্বর মাসের আমরা ৫ পরিবার ঘরবাড়ি নির্মাণ করি।
ছাংওডং পাড়া কারবারি (পাড়ার প্রধান) সাউপ্রু মারমা বলেন, ম্রো সম্প্রদায় ৫ পরিবার, মারমা সম্প্রদায়ের ১১ পরিবার নিয়ে আমরা গত ১১ বছর যাবৎ বসবাস করে আসছি। আমাদের জুম চাষের একই এরিয়া (জায়গা) সম্প্রদায়িক সম্প্রীতি মাধ্যমে হাতে হাত রেখে সুন্দর ভাবে বাস করে আসছি। কিন্তু হেডম্যন অংসাথুই মারমা আমাদের ছাংওডং পাড়া দুইভাগের বিভক্ত করে সম্প্রদায়িক বিবাদের সৃস্টি করে দিয়েছে। আমাদের মধ্যে এ বিবাদ চলতে থাকলে যে কোনো মুহূর্তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হতে পারে। সে জন্য হস্তক্ষেপ চেয়ে জেলা প্রশাসক মহোদয় নিকট অভিযোগ করেছি।
ঙাঁফাখুম পাড়া বাসিন্দা বিজয় মানিক ত্রিপুরা কারবারি বলেন, পর্যটক এলাকা নাফাখুং ঝর্ণা পাশে ২০১৯ সালে নাফাখুং পাড়া নামে গড়ে উঠে ৩২ টি পরিবারে একটি গ্রাম। গ্রামটিকে ও উচ্ছেদে হুমকি দিয়ে পাঁয়তারা করে চলেছে হেডম্যান অংসাথুই মারমা। গ্রামে পার্শ্বে সমতল জায়গা প্রায় ৩০ একর জায়গা ও তার নামে না দিলে কাউকে গ্রামে থাকতে দেবে না বলেও হুমকি দেয় তিনি। এছাড়াও আমাকে কারবারি নিয়োগ করবেন বলে ৫০ হাজার টাকা চেয়েছেন আমি ৩০ হাজার নগদ দিয়েছি। টাকার দেয়া তিন বছর হয়েছে আমাকে এখন ও নিয়োগপত্র দেয়া হয়নি। এছাড়াও আমার ছেলে মেয়েকে স্থায়ী বাসিন্দা সনদ পত্র দেননি তাই ভোটার তালিকা অন্তর্ভুক্ত করার সম্ভব হয়নি ছেলে মেয়েদের।
রুনাজন পাড়া বাসিন্দা হানারাং ত্রিপুরা বলেন, আমি ১৭ বছর পাড়ার কারবারি হিসেবে পাড়ার পরিচালনা করে আসছি কিন্তু আমাকে এবং পাড়াবাসীদের না জানিয়ের সূজন নামে অন্য একজনকে কারবারি নিয়োগ বাণিজ্য করে আমার মান সম্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন হেডম্যান সাহেব।
কামাচ্ছি পাড়া বাসিন্দা সাবেক তিন্দু ইউপি মেম্বার অংছেন খুমি বলেন, আমাদের পাড়ার থেকে ৪৪ পরিবার থেকে অনেক টাকা দিয়েছি তিন বছর হলো কাউকে বন্দোবস্তি করে দেননি।
অংসাথুই হেডম্যানের ছোট ভাই সুশীল সমাজের নাগরিক থোয়াইসিংমং মারমা বলেন, আমি গত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রতিদন্ডিতা করেছিলাম, আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে মৌজাবাসীদের পাহাড় সমান অভিযোগ থাকায় আমি অল্প ভোটের হারতে হয়েছে। আমার ভাই হেডম্যান নিজেকে বাঁচানোর জন্য ইতিমধ্যে বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগের যোগ দিয়েছে। ছাংওডং পাড়া ঘটনার ম্রো সম্প্রদায় ও মারমা সম্প্রদায় মধ্যে এ অবস্থা চলতে থাকলে যে কোন মুহূর্তে বড় ধরনে সংঘর্ষ বাঁধতে পারে। গত মাসের সংঘর্ষ হয়েছিল তখন তিন জন গুরুত্ব আহত হয়ে হাসপাতালের চিকিৎসা নিতে হয়েছে। সে হেডম্যান হিসেবে মৌজা পরিচালনা যোগ্যতা দেখছি না।
যোগাযোগ করা হলে ৩৬৮ নং মিবক্যা মৌজা হেডম্যান অংসাথুই মারমা বলেন, আমার বিরুদ্ধের জেলা প্রশাসক কর্তৃক অভিযোগ গুলি সম্পূর্ণ মিথ্যা বানোয়াট ও ষড়যন্ত্রমূলক করা হয়েছে।

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.