দৈনিক নবতান
জনতার সংসদ

BREAKING NEWS

৬৭৮ জন জাল সনদধারী শিক্ষককে চাকরিচ্যুত

0

জাহিদ মাহমুদ, মেহেরপুর প্রতিনিধি

সম্প্রতি সময়ে দেশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজে কর্মরত ৬৭৮ জন জাল সনদধারী শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় যার মধ‍্যে সেই তালিকায় মেহেরপুরে রয়েছে ৬ জন শিক্ষক। তার মধ‍্যে গাংনী উপজেলার বামন্দী নিশিপুর স্কুল এন্ড কলেজেই আছেন ৩ জন শিক্ষক।

জেলায় এ সকল জাল সনদে চাকুরী পাওয়া শিক্ষকদের নিয়ে চলছে নানা সমলোচনার ঝড়।

শিক্ষার্থীদের অনেক অভিভাবকেরা বলছেন, জাল সনদে চাকুরী পাওয়া শিক্ষকরা তথ‍্য চুরি করে চাকুরী করছেন, তাই তাদের কাছ থেকে ছাত্র -ছাত্রীদের ভালো কোন শিক্ষা পাওয়ার আসা করা যায় না।

অভিযুক্ত শিক্ষকদের অনেকেই বলছেন,আমাদের সনদ ও চাকুরীর নিয়োগ সঠিক পদ্ধতিতেই হয়েছে।

প্রতিষ্ঠান প্রধানরা বলছেন, আমাদের কাছে এখনো সরকারি ভাবে কোন নির্দেশনা আসেনি। আসলে নির্দেশনা অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

 

অভিযোগ ওঠা ছয় শিক্ষকরা হলেন- মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি এআরবি কলেজের যুক্তিবিদ্যার প্রভাষক – ফাতেমা মহতাসিমা (ইনডেক্স নং ৩০৮২১৫৮)।

মোমিনপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কম্পিউটার শিক্ষক মুজিবুর রহমান ( ইন্ডেক্স নং ১০৫৭৮৪৯)।

গাংনী উপজেলার বামন্দী নিশিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের কম্পিউটার শিক্ষক আরেফিন ইসলাম (ইন্ডেক্স নং ২০১০৫৪০)। কলেজ শাখার তথ্য ও প্রযুক্তি শিক্ষার শিক্ষক প্রভাষক মাহমুদ হাসান। একই প্রতিষ্ঠানের প্রদর্শক কম্পিউটার জাহাঙ্গীর আলম। এবং একই উপজেলার সাহেবনগর বহুমুখী উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কম্পিউটার শিক্ষক কাফুর উদ্দীন।

বামন্দী নিশিপুর স্কুল এন্ড কলেজের ৮ম শ্রেনীতে পড়ুয়া শিক্ষার্থী শিহাব উদ্দিনের বাবা চাউল ব‍্যাবসায়ী সেলিম রেজা বলেন, এই প্রতিষ্ঠানে আমার বড় ছেলে শিহাব লেখা পড়া করে। এখন শুনছি নাকি এখানকার শিক্ষকদের সার্টিফিকেট জাল করে অনেকেই চাকুরী করছে। জাল সনদে চাকুরী পাওয়া শিক্ষকরা তথ‍্য চুরি করে চাকুরী করছেন, তাই তাদের কাছ থেকে ছাত্র -ছাত্রীদের ভালো কোন শিক্ষা পাওয়ার আসা করা যায় না।

বামন্দী নিশিপুর স্কুল এন্ড কলেজের অভিযোগ ওঠা তিন শিক্ষক বলছেন, কিছুদিন আগে আমাদের সনদের বিষয় নিয়ে দুদকে অভিযোগ ওঠে ছিলো। সেখান থেকে তারা আমাদের সনদ সঠিক বলে অব‍্যাহতি দিয়েছে। এখন আবার নতুন করে শুনছি।

গাংনী উপজেলার সাহেবনহর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অভিযুক্ত শিক্ষক কাফুর উদ্দীন বলেন, আমি নট্রামস কর্তৃক কম্পিউটার সনদ নিয়েছি। আমাকে ২০১৩ সালে একবার ধরেছিল সেখানে আমার এই সনদ দেখিয়ে রেহাই পেয়েছি। এবার আমার এই সনদকে জাল বললে আমি আইনের আশ্রয় নেব। কারণ, এর সঙ্গে আমাদের সম্মান জড়িয়ে আছে।

বামন্দী নিশিপুর স্কুল এন্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম বলেন,আমরা বিভিন্ন অনলাইনের মাধ্যমে এই খবরটি জেনেছি। সবচেয়ে দুর্ভাগ্য ও কষ্টের বিষয় যে আমাদের প্রতিষ্ঠানের তিন শিক্ষক রয়েছেন এ তালিকায়। তবে সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে কোনো চিঠিপত্র আসেনি। সরকারিভাবে বা বোর্ড কর্তৃক কোনো চিঠি পত্র পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

একই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি মাসুম রেজা বলেন, জাল সনদধারীদের তালিকা করে সরকার খুব ভালো কাজ করেছে। যদিও আমার প্রতিষ্ঠানেরই তিনজন শিক্ষক রয়েছে। তারপরও বলবো যারাই জাল সনদে চাকুরী করছে তাদের সকলের বিরুদ্ধেই দ্রুত আইনিব‍্যাবস্থা গ্রহণ করা উচিৎ। এখনো আমাদের কাছে লিখিত কোন নির্দেশনা আসেনি। আসলে তাৎক্ষণিকভাবে ব‍্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জেলা শিক্ষা অফিসার আব্বাস উদ্দিন বলেন, যে ৬ শিক্ষকের বিরুদ্ধে জাল সনদে চাকুরী নেয়ার অভিযোগ ওঠেছে, আমরা তাদের বিষয়ে স্বস্ব প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পরিষদ ও প্রতিষ্ঠান প্রধানদের খোঁজ খবর নিয়ে জানাতে বলেছি। সেগুলো জেনে আমরা উব্ধোতনদের জানানোর পরে তারা যে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে নির্দেশ দেবে। তখন তাদের বিরুদ্ধে সেই ব‍্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।

সম্প্রতি সময়ে দেশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজে কর্মরত ৬৭৮ জন জাল সনদধারী শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

একই সঙ্গে তাদের এমপিও বন্ধ করার এবং অবৈধভাবে এমপিও বাবদ ভোগ করা লাখ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরত নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরকে।

এ ছাড়া জাল সনদধারী যেসব শিক্ষক অবসরে গেছেন তাদের অবসর সুবিধা বাতিল করতে বলেছে মন্ত্রণালয়। যারা অবসরে গেছেন বা চাকরি ছেড়েছেন তাদের টাকা অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে আদায় করতে বলা হয়েছে। আর জাল সনদধারীদের বিরুদ্ধে মামলা করতে হবে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের। জাল সনদধারী শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে অধিদপ্তরকে বলেছে মন্ত্রণালয়।

সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে এসব নির্দেশনা দিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

সূত্র,ডিআইএ এর পত্র নং-৩৭.১৯.০০০০.০৬১.১৬.০৪৩.২৩ তাং- ০৮/০১/২০২৩ স্মারকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কয়েক দিন আগে চিঠি দিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরকে (মাউশি) এই ব্যবস্থা নিতে বলেছে।

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.