দৈনিক নবতান
জনতার সংসদ

আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হলো নীলাচল পর্যটনের গেটম্যান আদিব বড়ুয়া

0

সাইফুল ইসলাম: বান্দরবান জেলা প্রতিনিধি:
টিকিটের টাকা আত্মসাৎ, পর্যটকবাহী গাড়ির চালকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার এবং নীলাম্বরী রিসোর্টের গোপন পার্টনারশিপ নেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে বান্দরবানের পর্যটনকেন্দ্র নীলাচলের প্রধান গেটম্যান ও জেলা প্রশাসনের কর্মচারী আদিব বড়ুয়ার বিরুদ্ধে।
শনিবার স্থানীয় বাসিন্দা ও নীলাচলের দায়িত্বে থাকা কর্মচারীরা জানান, নীলাচলের দায়িত্ব নেওয়ার পর কয়েক মাস যেতে না যেতেই টাকা হাতিয়ে নেওয়ার এ কৌশল আয়ত্ত করেন আদিব। আস্তে আস্তে পরিবর্তন হয় আচরণেও। স্থানীয় চালক, কর্মচারীসহ সবার সঙ্গে করেন দুর্ব্যবহার। পকেট ভারী হতেই গোপনে পার্টনারশিপ লাভ করেন নীলাম্বরী রিসোর্টেরও। নীলাচল গেটের দায়িত্বে থাকায় গেটের পাশাপাশি কর্টেজ পরিচালনাটাও তার জন্য সহজ হয়ে পড়ে। এ যেন কইয়ের তেলে কই ভাজা।
টিকিট কাউন্টার ও নীলাচলের দায়িত্বে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, ‘আদিব বড়ুয়া প্রথমে কয়েক মাস সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর টাকার নেশায় পড়েন। শুরু করেন পর্যটকদের টিকিট না দিয়ে টাকা হাতানোর কাজ। প্রতিদিন যে পরিমাণে পর্যটক প্রবেশ করেন তার অর্ধেকও দেখানো হয় না হিসাবের খাতায়। প্রধান গেটম্যান হওয়ায় তার এ কাজের প্রতিবাদ করতে পারেন না অন্যরা।’
তারা আরও জানান, কয়েক বছর নীলাচলের দায়িত্ব পালন করার পর আদিবের সচ্ছলতা ফিরেছে কয়েক গুণ। গোপনে পার্টনার হয়েছেন নীলাম্বরী কটেজেরও।
এ বিষয়ে নীলাচলের এক কর্মচারী বলেন, ‘যেহেতু আদিব বড়ুয়া এখানকার প্রধান, তাই আমাদের এসব বিষয়ে বিরোধিতা করার সুযোগ নেই। যা বলবেন তাই করতে হবে। তার নির্দেশ না মানলে চাকরি থাকবে না।’
শনিবার বিকালে নীলাচল পর্যটনকেন্দ্রে পর্যটকদের সঙ্গে কথা বলে অভিযোগের সত্যতাও পাওয়া গেছে। রংপুরের খান মোহাম্মদ আতাউর জানান, তারা ১২ জনের একটি দল বেড়াতে এসেছেন নীলাচলে। গেটে যাওয়ার পর ১২ জনের কাছ থেকে ৬শ’ টাকা নেওয়া হলেও টিকিট দিয়েছে সাতটি।
এদিকে, কয়েকজন চাঁদের গাড়ির চালক বলেন, ‘নিজের স্বজাতি হলে প্রধান গেটম্যান তাদের বিনা টাকায় ভেতরে ঢুকিয়ে দেয় গাড়িসহ। অথচ অন্যদের বেলায় অত্যন্ত কঠোর। সঠিক তদারকি না থাকা ও একজনকে দীর্ঘদিন গেটের প্রধান হিসেবে দায়িত্বে রাখার কারণে পর্যটকদের অর্ধেক টাকা নিয়ে যাচ্ছে সে।’ বিষয়গুলো তদন্ত করে নতুন কর্মচারী দেওয়ার দাবি জানান তারা।
স্থানীয় বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম সাগর ও নয়ন বলেন, ‘প্রধান গেটম্যান আদিব স্থানীয়দের সঙ্গেও উগ্র আচরণ করে। তার আচরণে অ‌তিষ্ঠ পর্যটকরাও। বিষয়গুলো খ‌তিয়ে দেখা উচিত। নীলাচ‌লের দা‌য়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তার চলাফেরায় আমূল প‌রিবর্তন হয়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে নীলাচলের দায়িত্বে থাকা প্রধান গেটম্যান ও জেলা প্রশাসনের কর্মচারী আদিব বড়ুয়াকে ফোন করলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং অভিযোগ অস্বীকার করেন। পরে ব্যস্ততার কথা বলে ফোনের সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেন।
বিষয়গুলো খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন নীলাচলের দায়িত্বে থাকা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোজাহেরুল হক। তিনি বলেন, ‘বিষয়গুলো জানলাম। আমি সবকিছু যাচাই করে সত্যতা বের করে ব্যবস্থা নেবো।’

Leave A Reply

Your email address will not be published.