■ জয়নাল আবেদীন, গোপালপুর (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা
বনজঙ্গল থেকে নাম জাঙ্গালিয়া। মধুপুর বনাঞ্চলের চাড়ালজানি বিটের চুনিয়া মৌজার জাঙ্গালিয়ার অধিকাংশ মানুষ দিনমজুর ও ভূমিহীন। জীবন- জীবিকা বননির্ভর। কিন্তু বন বিভাগ একের পর এক বনায়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে নামলে বন উজাড় শুরু হয়। সেই বিরান ভূমিতে আবার বিদেশি বৃক্ষ চারায় বনায়ন বৈচিত্র্যময় প্রাণ-প্রকৃতির অস্তিত্বকে বিলীন করে দেয়। চিরচেনা গাছপালা, গুল্মলতা ও বিরল ভেষজ হারিয়ে যায়। সামাজিক বনায়নের নামে ভুল বনায়ন, বন সংরক্ষণের নামে বন বিনাশসহ নানা অভিযোগের কথা বললেন জাঙ্গালিয়ার সত্তরোর্ধ্ব প্রবীণ শাহজাহান সাজু। তিনি ছাড়াও গ্রামের অনেক প্রবীণ বলছেন, বন থাকুক বনের মতো। বন কখনো সৃজন করা লাগে না। নিজের গতিতেই গজিয়ে উঠে বন। নানা প্রকল্পের ডামাডোলে এই চিরায়ত নিয়মকে পালটে দেওয়ার ‘ফরেস্ট পলিসি’ পরিবেশ সহিষ্ণু ও টেকসই বলে বিবেচিত হয়নি। আশপাশের চুনিয়া, ঝাটারবাইদ ও মাগন্তিনগর গ্রামের বাসিন্দারা বলছেন, টুকটাক বন অপরাধ, বনজ সম্পদ পাচার বা বনভূমি দখলের প্রবণতা সবসময়ই ছিল। তবুও ছায়াঘেরা, বনঘেরা জীবন-জীবিকা ও আরণ্যক সংস্কৃতি নিয়ে ভালো ছিলেন তারা। কিন্তু নব্বইয়ের দশকে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নে মধুপুর বনাঞ্চলে টিএনডিপি প্রকল্পের মাধ্যমে বিদেশি বৃক্ষচারার বনায়নের ফলে প্রাকৃতিক বন ধ্বংসের মহাযজ্ঞ শুরু হয়। ঐ সময়ে জাতীয় সদর উদ্যান, দোখলা, অরনখোলা ও মধুপুর রেঞ্জে যে ৬ হাজার একরে অংশীদারিত্বের উডলট মডেলের বনায়ন হয় তার সিংহভাগ এলাকায় গজারি কপিজ নির্বিচারে সাবাড় করা হয়। অন্যান্য এলাকার মতোই চাড়ালজানি বিটের চুনিয়া মৌজার ১৭৫১ দাগে জাঙ্গালিয়া গ্রামের ১৯৭ একর গজারি বন নিধন করে বনায়ন হয়। ১০ বছর পর সেসব গাছ কেটে হিস্যা বণ্টন করা হয়। টিএনডিপি প্রকল্পের পর ফরেস্ট্রি সেক্টর প্রকল্প, সুফল প্রকল্প, শাল কপিজ রক্ষণাবেক্ষণসহ একাধিক প্রকল্পের
মধুপুরে বন বিনাশের নেপথ্যে নানা প্রকল্প
টাঙ্গাইলের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাজ্জাদুজামান জানান,
বন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যে বনায়ন প্রকল্প গ্রহণ করেন মাঠকর্মী হিসেবে তারা সেটি বাস্তবায়ন করেন মাত্র। প্রভাবশালী মহলের হস্তক্ষেপ এবং স্টাফ সংকটের দরুন মধুপুরের বন সংরক্ষণে খুব সমস্যা হচ্ছে বলে জানান তিনি
মাধ্যমে জাঙ্গালিয়াসহ সারা মধুপুরে ফলোআপ বনায়ন হয়। এভাবে বনভূমিতে ক্রমাগত যান্ত্রিক হালচাষ, বিষ, সার ও কীটনাশক প্রয়োগে গাছ ও ফসলের মিশ্র আবাদে গজারির শেকড়বাকড় ও জিন হারিয়ে যায়।
কিন্তু এর মধ্যেই ঘটে ভিন্ন এক ঘটনা। জাঙ্গালিয়ার সত্তর একরের ২৮ জন অংশীদার বনায়নে এক ভিন্ন ইতিহাস সৃষ্টি করেন। ছাত্তার আলীর স্ত্রী মাজেদা বেগম, হাতেম আলীর পুত্র সিদ্দিক মিয়া, আমজাদ আলীর পুত্র হাকিম, মোমেন তালুকদারের স্ত্রী ছাহেরা বেগমসহ সবাই বনভূমিতে হালচাষ ছাড়াই বিদেশি প্রজাতির আকাশমনি, বকাইন, মেনজিয়াম ও ইউক্যালিপটাশ চারা লাগান। জমিতে সুপ্ত অবস্থায় থাকা গজারির শেকড় ছয় মাসের মাথায় বিদেশি গাছের চারা টপকিয়ে ওপরে
উঠে যায়। বনকর্মীরা গজারি চারার বাড়বাড়ন্ত দেখে কেটে ফেলার নির্দেশ দেন। কিন্তু অংশীজনরা কাটতে রাজি হননি। অল্প দিনেই ডালপালা বিস্তার ঘটিয়ে পুরো অবয়বে ফিরে আসে গজারি। গজারির ছায়ায় মারা পড়ে বিদেশি জাতের সব চারা। পাশাপাশি সহজাত উদ্ভিদ ও গুল্মলতাদির পুনর্জন্ম ঘটে। এ বনে এখন পশুপাখি ঘুরে বেড়ায়। ক্ষুদ্র পরিসরে প্রাণ-প্রকৃতি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। দীর্ঘ ৩৪ বছর ধরে বিনা বেতনে গজারি বন পাহারা দিচ্ছেন তারা। গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেন বলছেন, দরিদ্র বনবাসী নিজস্ব জ্ঞানবুদ্ধিতে গজারি বন ফিরিয়ে এনে প্রশিক্ষিত বনকর্মীদের বুঝিয়ে দিয়েছেন প্রাকৃতিক বন আদিরূ পে ফিরিয়ে আনা যায়। উডলট মডেলের বনায়ন বন্ধ এবং রিজেনারেশনের মাধ্যমে প্রাকৃতিক বন ফিরিয়ে আনার দাবি জানান তিনি। সাবেক ফরেস্ট রেঞ্জার এবং বনবিষয়ক লেখক কামরুল মুজাহিদ গবেষণা থেকে বলছেন, মধুপুর বনাঞ্চলের লালমাটির ভূমি মাত্র দুই বছর অনাবাদি রাখা হলেই গজারি বনের পুনর্জন্ম ঘটে। কারণ গজারি বীজ পাখির মতো উড়ে অনেক দূরে গিয়ে পড়ে এবং অনায়াসে গজিয়ে উঠে। পরিবেশবিদ আফজাল হোসেন জানান, যেখানে প্রাকৃতিকভাবে গজারি বন গজিয়ে উঠার নিশ্চয়তা রয়েছে, সেখানে বিদেশি ঋণের টাকায় নানা প্রকল্প গ্রহণ করে ক্ষতিকর বনায়ন করার অভিযোগ উঠছে বন বিভাগের বিরুদ্ধে। বনবাসীর পরিবেশগত লৌকিক জ্ঞান ও লব্ধ অভিজ্ঞতার প্রতি বন বিভাগ গুরুত্ব দেয়নি। ফলে বন মন্ত্রণালয়ের চাপিয়ে দেওয়া প্রকল্পের খেসারত দিচ্ছে মধুপুর বন ও বনবাসী।
টাঙ্গাইলের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাজ্জাদুজামান জানান, বন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যে বনায়ন প্রকল্প গ্রহণ করেন মাঠকর্মী হিসেবে তারা সেটি বাস্তবায়ন করেন মাত্র। প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম উভয় ধরনের বনায়নের গাছকাটা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। প্রভাবশালী মহলের হস্তক্ষেপ এবং স্টাফ সংকটের দরুন মধুপুরের বন সংরক্ষণে খুব সমস্যা হচ্ছে বলে জানান তিনি
BREAKING NEWS
- বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে নিহত ও আহতদের তালিকা তৈরী করুন নিহত পরিবারের সদস্যদের কর্মসংস্থান ও আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা জরুরী -ঠাকুরগাঁওয়ে মির্জা ফখরুল
- বান্দরবানে চেক প্রতারণায় পলাতক হেডম্যান মং থোয়াই ম্রয়
- যমুনা সারকারখানা চালুর দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচী
- হিন্দু সম্প্রদায়ের শারদীয় দূর্গাপুজা শান্তিপূর্ণ ভাবে উদযাপন উপলক্ষে মতবিনিময় সভা
- জনহয়রানি মূলক কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে ওয়ার্ড বিএনপি’র মতবিনিময় সভা
- ঈদ-ই মিলাদুন্নবি (স.) উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত
- সরিষাবাড়ী সালেমা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ২৮ জন শিক্ষক -কর্মচারীর অনাস্থা
- ঠাকুরগাঁওয়ে জমি নিয়ে সংঘর্ষে নিহত -১
- গোপালপুরে প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির কমিটি গঠন
- কোন দলের ছত্রছায়ায় এসে আপনারা দুর্নীতি করার চেষ্টা করেন, ছাত্র-জনতা আপনাদের দেখে নিবে