দৈনিক নবতান
জনতার সংসদ

ধনবাড়ীতে মৃত মুক্তিযোদ্ধা চাচাকে পিতা দেখিয়ে ভাতা উত্তোলন করে ভাতিজা

0

ধনবাড়ী (টাংগাইল) প্রতিনিধি :

মৃত মুক্তিযোদ্ধা চাচাকে পিতা দেখিয়ে ভাতা উত্তোলন করে ভাতিজা হারুনার রশিদ। টাংগাইলের ধনবাড়ী উপজেলার বলিভদ্র ইউনিয়নের  ০৮নং ওয়ার্ডের ইসপিন্জারপুর গ্রামের মৃত আজমত আলীর ছেলে হারুন অর রশিদ ও তার মা রাশেদা বেগম  মুক্তিযোদ্ধা সম্মানি ভাতা পেতে কাগজে কলমে অবিবাহিত মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা  ফজলুর রহমান চাচাকে পিতা দেখিয়ে ২০২২ সাল থেকে ভাতা উত্তোলন করছে ভাতিজা হারুন অর রশিদ । সে এই ভাতার লোভে নিজের পিতা ও ভাই বোন কে বাদ দিয়ে মায়ের নাম ঠিক রেখে মায়ের স্বামীর নাম এর সাথে মৃত চাচার নাম বাসয়ে মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা চাচাকে স্বামী ও পিতা দেখিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে প্রতারণার মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধার সম্মানি ভাতা উত্তোলন করে আসছে।

সোনালী ব্যাংক ধনবাড়ী শাখা একাউন্ট নং ৬০০৫৩০১০১৮৯৯৮ থেকে হারুন অর রশিদ ও তার মা রাশেদা বেগম নিয়মিত মুক্তিযোদ্ধার সম্মানী ভাতা উত্তোলনের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। এদিকে কোন ব্যক্তি মৃত হওয়ায় ৬ বছর পরেও কীভাবে পুত্র সন্তানের বাবা হলেন? এই প্রশ্নও উঠেছে নানা মহলে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান ১৯৮৩ সালে মৃত বরণ করেন। আর সেই মৃত্যুর তারিখ পালটিয়ে গত ২৮-০৮-২০১৯ইং তারিখে বলিভদ্র ইউনিয়ন হতে সেই সময়ের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ সুরুজ্জামান মিন্টর নিকট হতে তার জন্ম তারিখ ০৩-০২-১৯৩৬ সাল দেখিয়ে মৃত্যু তারিখ লেখান ১৩-০২-১৯৯১ সালে লেখিয়ে মৃত্যু সনদ নেন। যাহা প্রতারনা করে লেখান। বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান মৃত্যুর  সে সময় তিনি অবিবাহিত ছিলেন। তার মৃত্যুর চার বছর পর ১৯৮৭ সালে জন্ম হয় হারুন অর রশিদ । অথচ সেই চাচাকে পিতা দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে প্রায় ২০২২সাল থেকে মুক্তিযোদ্ধা সম্মানি ভাতা উত্তোলন করে আসছে প্রতারক হারুন অর রশিদ ও তার মা রাশেদা বেগম  । এই হারুন অর রশিদ ধনবাড়ী উপজেলার বলিভদ্র ইউনিয়নের  ০৮নং ওয়ার্ডের ইসপিন্জারপুর গ্রামের মৃত আজমত আলীর ছেলে হারুন অর রশিদ ও তার মা রাশেদা বেগম  । তার আপন বড় ভাই আক্তার হোসেন এর ভোটার আইডিতে পিতামৃত আজমত আলী আছে। প্রতারক হারুন অর রশিদ এর আগের আইডি র্কাড গত ০৩/০৬/২০০৮ ইং তারিখে ডেলিভারী দেওয়া আইডি নাম্বার ৯৩১২৫৮০৪৭৯৭১৩ এবং ও তার মা রাশেদা বেগম এর একই তারিখে ডেলিভারী দেওয়া আইডি নাম্বার ৯৩১২৫২১৪৯১৬৪১ নং থাকলেই প্রতারণার মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধার সম্মানি ভাতা উত্তোলন কারার জন্য গত ০৫/১১/২০২১ ইং তারিখে প্রতারণার মাধ্যমে আবার হারুন তার পিতার নাম ও তার মা রাশেদা বেগম নিজের স্বামীর নাম আজমত আলীর স্থালে মুক্তিযোদ্ধার ফজলুর রহমান করে নতুন আইডি কাড করেন। যাহার আইডি নম্বর হলো ১৯৪৮৯১২৯২৫,ও তার মা রাশেদা বেগম এর নম্বর ৯৩১২৫২১৪৯১৬৪১।

হারুন অর রশিদ ও তার মা রাশেদা বেগমের প্রতারণা এখানেই শেষ নয়। তিনি বলিভদ্র ইউনিয়ন হতে সেই সময়ের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ সুরুজ্জামান মিন্টর নিকট হতে গত ২৯-০৭-২০১৯ইং তারিখে প্রতারনার মাধ্যমে প্রতায়ন পত্র নেন যে গত ১৩-০২-১৯৯১ ইং তারিথে বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান মৃত্যুর বরণ করেন।

আবার বলিভদ্র ইউনিয়ন হতে সেই সময়ের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ সুরুজ্জামান মিন্টর নিকট হতে গত ২১-০৭-২০১৯ইং তারিখে হারুন অর রশিদ ও তার মা রাশেদা বেগম প্রতারণার মাধ্যমে মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান এর ওয়ারিশান সনদ উত্তলন করেন যে রাশেদা বেগম বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান এর স্ত্রী,ও হারুন আর রশিদ তার পত্র দাবি করে চেয়ারম্যান এর নিকট হতে ওয়ারিশান সনদ উত্তন করেন।

আবার বলিভদ্র ইউনিয়ন হতে বতমান  বিনা ভোটের চেয়াম্যান মো: রফিকুল ইসলাম তালুকদার এর নিকট হতে প্রতারক হারুন অর রশিদ  নাগরিকত্ব সনদ  উত্তলন করেন।

আবার বলিভদ্র ইউনিয়ন হতে বতমান  বিনা ভোটের চেয়াম্যান মো: রফিকুল ইসলাম তালুকদার এর নিকট হতে প্রতারক হারুন অর রশিদ গত ৩০-০১-২০২২ ইং তারিখে বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান মৃত্যুর  সনদ  উত্তলন করেন।

আবার বলিভদ্র ইউনিয়ন হতে বতমান  বিনা ভোটের চেয়াম্যান মো: রফিকুল ইসলাম তালুকদার ও ইউপি সদস্য মো: মনিরুজ্জান এর মাধ্যমে প্রতারক হারুন অর রশিদ গত ২৭-০১-২০২২ ইং তারিখে বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান এর  ছেলে প্রতারক হারুন অর রশিদ ও তার মা রাশেদা বেগম ওয়ারিশ দাবি করে ওয়ারিশান  সনদ  উত্তলন করেন। শুধু তাই নয় মৃত জন্ম দাতা পিতার নাম বাদ দিয়ে মৃত্যু চাচার মানে নিজের মা কে বিয়ে দিয়েছে বলে ভূয়া কাবিন নামা দাখিল সহ উপরোক্ত সকর কাগজ পত্র দাখিল কর মৃত মুক্তিযোদ্ধা চাচাকে পিতা দেখিয়ে সুকৌশলে ধনবাড়ী উপজেলা প্রশাসনের গত ২৪/০১/২০২২ইং তারিখে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা কার্যক্রম বাস্তবায়ন কমিটির সভায় ২ নং আলোচনায় ফজলুল রহমান মৃত্যু জনিত কারনে একমাত্র ওয়ারিশ দাবি করে মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা প্রাপ্তির আবেদন করার কারনে উক্ত তারিখে অনুমোদন এর জন্য জেলা কমিটিতে প্রেরণ করেন।

বিষয়টি নিয়ে বলিভদ্র ইউনিয়ন সাবেক চেয়ারম্যান মুহাম্মদ সুরুজ্জামান মিন্টর নিকট

জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন আমি স্থানীয় মেম্বারদের মাধ্যমে জেনে কাগজ পত্র দিয়েছি। তবে পরে জানে পারি যে হারুন অর রশিদ আসলে বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান ছেলে না আর তার মা রাশেদা বেগম বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান স্ত্রী না। রাশেদা বেগম এর স্বামী ও হারুন অর রশিদের বাবা মৃত্যু আজমত আলী। হারুন অর রশিদ আসলে একজন প্রতারক। এটা এলাকার সবাই জানে।

বিষয়টি নিয়ে বলিভদ্র ইউনিয়ন বিনা ভোটের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি যে সকল কাগজ পত্র দিয়েছি সে টি সাবেক কৃষি মন্ত্রী মধুপুর ধনবাড়ী আসন থেকে আওয়ামীলীগের সংসদ সদস্য ড,মো: আব্দুর রাজ্জাক এর সুপারিশে দিয়েছি । আমি জানতাম যে হারুন অর রশিদ এক জন প্রতারক। আমি কাগজ পত্র দিতে ওশিকার করিলে সেই ছেলে মন্ত্রীর ডিও মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাওয়ার জন্য আবেদন এর মধ্যে তার সুপারিশের কাগজ দেখার পর  দিয়েছে। তবে এটা সত্য যে হারুন অর রশিদ কোন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান না। হারুন ও তার মা রাশেদা বেগম এক জন প্রতারক।

বিয়য়টি নিয়ে কথা হয় সোনালী ব্যাংক ম্যানেজারের সাথে নাম বলতেই তিনি বলেন ভাই যাই করুন আমার ব্যাংক থেকে হারুন ও তার মা মোটা অংকের টাকা মুত্তিযোদ্ধার ভাতার উপর ঋণ নিয়েছে। যাই করুন আমার ঋণটা আগে পরিশোধ হওয়ার সময় দিন। পরে আমি জাতে পারি অন্য মুত্তিযোদ্ধার মাধ্যমে যে সেই ছেলে হারুন ও তার মা এক জন প্রতারক।

স্থানীয় অনেকেই আক্ষেপ করে জানান, গ্রামের মৃত আজমত আলীর ছেলে ও হারুন অর রশিদ চাচা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান ১৯৮৩ সালে অবিবাহিত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর ৪ বছর পরে হারুন অর রশিদ জন্ম হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান ব্যক্তি জীবনে অবিবাহিত ও তার কোন ওয়ারিশ না থাকায় তার প্রাপ্য সম্মানি ভাতা পাওয়ার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে হারুন অর রশিদ এই জালিয়াতির আশ্রয় নেয়।হারুনের স্ত্রী জানান এক ভিডিও স্বাক্ষাৎ কারে জানান,আমার স্বামীর বাবার নাম আজমত কিন্ত আমার চাচা শুশুর বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান ফজু মলভী মিত্যুর আগে আমার স্বামী কে পালতেন। সেই হিসাবে আমার স্বামী ফজু মলভীর পালক সন্তান।

প্রতারক হারুনের সাথে কথা হলে তিনি বিদেশ ওমান থাকায় তিনি মোবাইল ফোনে বলেন, আমার জন্ম দাতা বাবা মৃত্যু আজমত আলী,বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান আমার পালক বাবা। ,আমি পালক বাবা হিসাবে তার মুক্তিযোদ্ধোর সকল কাগজপত্র মধুপুর মরহুম পরীমুল কান্তি গৌসামীর বাড়ীতে কাজ করার সুবাধে তার মাধ্যমে আমাদের এমপি ড.মো: আব্দুর রাজ্জাক এর ডিও লেটার ও ধনবাড়ী উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় আমি আমার পালক বাবার নামে সকল কাগজপত্র ঠিক করে মুক্তিযোদ্ধার ভাতা উত্তলন করাসহ বাংলাদেশ সোনালী ব্যাংক ধনবাড়ী শাখা হতে আট লক্ষ টাকা উত্তলন করে আমি বিদেশ এসেছি। যাহা সত্য আমি তাই বললাম। আমি একজন গরীব মানুষ আজ মিস্ত্রী কাজ করে খাই। আমার মুক্তিযোদ্ধার ভাতা বন্ধ যেন না হয় সেই দিক খেয়াল রাখবেন বলে সাংবাদিক এর নিকট আকুতি মিলতি করেন।

উপরোক্ত বিষয়টি নিয়ে গত ২৯/০৮/২০২৪ইং তারিখে টাংগাইলের ধনবাড়ী উপজেলা নিবার্হী অফিসার এর নিকট একটি লিখিত অভিযোগ করেন ধনবাড়ী প্রেসক্লাবের সহসভাপতি মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক সাংবাদিক।

উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, মো. বাবলু হোসেনের জন্ম ১৯৮৭ সালে। ২০০৮ সালে ভোটার হয় সে। জন্ম সনদ ও জাতীয় পরিচয় পত্র থেকে পাওয়া তথ্য মতে ২০০৮ সালে তার পিতার নাম ছিল মো. আজমত আলী এবং মাতা রাশেদা বেগম। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা সম্মানি ভাতা নিজে নামে পাওয়ার লোভে ২০২১ সালে সে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করে তার পিতা মো. আজমত আলীর নাম পরিবর্তন করে চাচা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান কে পিতা হিসেবে সংযোজন করে এবং তার মা রাশেদা বেগম এর স্বামীর নাম আজমত আলীর স্থলে  বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান কে স্বামী হিসেবে সংযোজন  করে । জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্মনিবন্ধনে মাতার নাম তার নিজ মা রাশেদা বেগমেরই নাম রাখে।

 

স্থানীয় বাসিন্দারা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান অবিবাহিত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর অনেক বছর পরে হারুনের জন্ম হয়। আর হারুন বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান ভাই আজমত আলীর ছোট ছেলে।

 

স্থানীয় ইউপি সদস্য ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, হারুন অর রশিদ জাতিয় পরিচয় পত্রে তার পিতার নাম পরিবর্তন করেছে। সেই সময় সংশোধনীর কাগজপত্র ডিজিটাল না হওয়ায় হাতে লিখেই পাঠানো হতো। মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান এর কোনো স্ত্রী, সন্তান না থাকায় উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা অফিস এর লোকজনের সুপারিশেই সংশোধনী কাগজপত্র পাঠানো হয়েছিল।

ধনবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলেন, এ বিষয়ে তিনি অবগত আছেন। কাগজপত্রাদি দেখে ব্যবস্থা নেবেন।

 

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.