সব কিছুতেই টাকা চান স্বাস্থ্য সহকারী
নওগাঁ সদর উপজেলার ইউনিয়ন স্বাস্থ্য সহকারী আব্দুস সামাদ মোল্লার বিরুদ্ধে মাতৃসেবা কার্ড, কিশোরী ও গর্ভবতীদের টিকা দেয়ার নামে টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। তিনি উপজেলার বলিহার ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড স্বাস্থ্য সহকারী হিসেবে দীর্ঘদিন থেকে কর্মরত আছেন। তার এ অনিয়মের সঙ্গে সদর উপজেলা অফিসের কর্মকর্তারা জড়িত বলেও অভিযোগ রয়েছে। এমনকি অফিসে একাধিক অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাননি এলাকাবাসী। সরকার দলীয় প্রভাব খাটিয়ে এসব অনিয়ম চালিয়ে যাচ্ছেন আব্দুস সামাদ মোল্লা।
জানা গেছে, প্রায় এক যুগ আগে বলিহার ইউনিয়নে ২নং ওয়ার্ডে নিন্দইন কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাস্থ্য সহকারী হিসেবে যোগদান করেন আব্দুস সামাদ মোল্লা। ১৫-৪৯ বছর বয়সী নারীদের বিনামূল্যে টিটেনাস টিকা দেয়ার নিয়ম থাকলেও টিকা প্রতি ১০০-৫০০ টাকা আদায় করেন তিনি। গ্রামের মহিলাদের টিকা দেয়ার সময় বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে বলেন ‘এ টিকা দিলে যক্ষা ও ক্যানসার ভালো হয়। বিদেশ থেকে নিয়ে আসা হয়েছে। বাহিরে অন্য কারো কাছে যা পাওয়া যাবে না। তোমাদের সুবিধার জন্য নিয়ে আসা হয়েছে।’
এছাড়া টিকাদানের কার্ড দেয়ার সময় ৫০০ টাকা থেকে এক হাজার টাকা আদায় করেন। বিশেষ করে যাদের সন্তানদের জন্য জন্ম নিবন্ধন করতে চান তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে থাকেন। গর্ভবতীদের মাতৃত্বভাতার জন্য মাতৃত্বসেবা কার্ডের প্রয়োজন হয়। তাদের কাছ থেকেও এক প্রকার জোর করে এক থেকে দেড় হাজার টাকা নিয়ে থাকেন। সিসিতে সপ্তাহে তিনদিন দায়িত্ব থাকলেও ঠিকমতো আসেন না। হাজিরা খাতায় পুরো সপ্তাহের একবারে স্বাক্ষর করেন। উপজেলা অফিসেও তার একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। অফিসকে নিয়ন্ত্রণ করে তিনি এসব অনিয়ম করে থাকেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
নিন্দইন মন্ডলপাড়া গ্রামের গৃহবধূ আকলিমা অভিযোগ করে বলেন, মাতৃত্বভাতার আবেদনের জন্য মাতৃত্বসেবা কার্ডের প্রয়োজন। গত ৭/৮ মাস আগে মাতৃত্বসেবা কার্ড দেয়ার জন্য আমার কাছ থেকে ১ হাজার ২শ টাকা নেন আব্দুস সামাদ মোল্লা। এছাড়া আমার ছেলে ওমর ফারুককে এ বছর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করানোর জন্য টিকার কার্ডের প্রয়োজন ছিল। এ কার্ডের জন্য তিনি দেড় হাজার টাকা দাবি করেন। পরে ৪/৫ বার ঘুরানোর পর ২শ টাকা দিতে চেয়েছিলাম। তিনি দেননি। পরে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারের কাছ থেকে টাকা ছাড়াই কার্ড নিয়েছি।
উত্তরপাড়া গ্রামের গোলাম মোস্তফা বলেন, আমি একজন স্বেচ্ছাসেবী। পোলিও টিকার দিন আমরা দুইজন স্বেচ্ছায় কাজ করি। সেদিন ১৫০ টাকা করে দু’জনের ৩০০ টাকা বরাদ্দ থাকে। কিন্তু সামাদ মোল্লা দু’জনকে দেয় ২০০ টাকা। তার অনিয়মের বিষয়ে ইতোপূর্বে অফিসকে বেশ কয়েকবার অবগত করা হয়েছে। কিন্তু কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। তার অনিয়মের মাত্রা বেড়েই চলেছে।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য সহকারী আব্দুস সামাদ মোল্লা বলেন, আমি আওয়ামী লীগ করি। বিএনপির লোকজন আমার পিছনে উঠে পড়ে লেগেছে। গত ১০/১২ বছর হলো ওই ওয়ার্ডে চাকরি করছি। কারো কাছ থেকে কোনো টাকা নিয়ে টিকা বা কার্ড দেয়া হয়নি। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা গুজব ছড়ানো হচ্ছে। এছাড়া হাজিরা খাতায় একদিনে সব স্বাক্ষর কখনো করি না।
নিন্দইন কমিউনিটি ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার এসএম আবুজার গিফারী বলেন, তিনি নিয়মিত সিসিতে আসেন না। মাঝে মধ্যে এসে হাজিরা খাতায় একবারে স্বাক্ষর করেন। এ বিষয়ে মৌখিক ভাবে একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
হেলথ ইন্সপেক্টর মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, তার বিরুদ্ধে মাঝেমধ্যেই অভিযোগ আসে। অনিয়মের ব্যাপারে তাকে অনেক বার আমরা সতর্ক করেছি। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
নওগাঁ সদর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন জন অভিযোগ করে। কিন্তু কেউ লিখিত অভিযোগ না করায় কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব হয় না। এছাড়া তার অনিয়মের বিষয়ে অফিস থেকে কোনো সহযোগিতা করা হয় না।