দৈনিক নবতান
জনতার সংসদ

BREAKING NEWS

আইনমন্ত্রীর বক্তব্য সরকারের ‘ইচ্ছাকৃত প্রতিবন্ধকতার বহিঃপ্রকাশ’: বিএনপি

0

নিজস্ব প্রতিবেদক
জাতীয় সংসদে বুধবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বক্তব্যে সরকারের ‘ইচ্ছাকৃত প্রতিবন্ধকতার’ বহিঃপ্রকাশ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স।

তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার ক্ষেত্রে তাদের এমন বক্তব্য শোভনীয় নয়। বুধবার (৩০ জুন) জাতীয় সংসদে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বক্তব্যের প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। তিনি তার বক্তব্যে ‘দোষ স্বীকার করে ক্ষমা চাওয়া ছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সু-চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার সুযোগ নেই’ বলে যা উল্লেখ করেছেন তাতে সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা এবং বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার ক্ষেত্রে সরকারের ইচ্ছাকৃত প্রতিবন্ধকতার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।’

বৃহস্পতিবার সকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, আইনমন্ত্রী ‘দোষ স্বীকার করে ক্ষমা না চাইলে বিদেশে যাওয়ার’ সুযোগ দেখছেন না, কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁর উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে যেতে আবেদন করা হলে তিনি বলেছিলেন- ‘সরকার যে শর্তে তাঁকে মুক্তি দিয়েছেন, সেই শর্ত শিথিল করলে খালেদা জিয়ার বিদেশে যেতে আইনগত কোনো বাধা থাকে না। এটা নির্ভর করছে একেবারেই সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর’ এবং তিনি আরও বলেছিলেন, ‘সরকার বিষয়টি ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছে’। আইনমন্ত্রীর এই বক্তব্য দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে সেসময় ফলাও করে প্রচারিত হয়েছিল। কিন্তু ২/১ দিন পরই তিনি ইউটার্ন নিয়ে বলেছেন, ‘সম্ভব নয়’ এবং এখন বলছেন ‘ক্ষমা চাইতে হবে’।

তিনি বলেন, এগুলো সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ এবং রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রিত ও কলুষিত করার ব্যর্থ চেষ্টা ছাড়া কিছুই নয়। যিনি কোনো অপরাধই করেননি তাঁর ক্ষমা চাওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। আইনমন্ত্রীর এই বক্তব্যের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদী সরকারের হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের প্রতিফলন ঘটেছে, যা ভ্রষ্টাচার ছাড়া কিছুই নয়।

বিএনপির এই নেতা বলেন, কর্তৃত্ববাদী সরকার যখন যেটা মনে করে তখন সেটি জনগণের ওপর চাপিয়ে দেয় এবং একইসাথে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালায়। বেগম খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রেও তাই ঘটছে। আমরা আইনমন্ত্রীর সংসদে প্রদত্ত বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা দূর করবার আহ্বান জানাচ্ছি।

এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ১/১১’র সরকার বাংলাদেশকে বিরাজনীতিকরণের অংশ হিসেবে ‘মাইনাস-টু’ ফর্মুলার বাস্তবায়ন ঘটাতে বেগম খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে তাঁদেরকে দণ্ডিত করে রাজনীতি থেকে মাইনাস করার ষড়যন্ত্র করেছিল। ২০০৮ সালে ১/১১’র সরকারের সাথে হাত মিলিয়ে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনার মামলাগুলো বিভিন্নভাবে শেষ করে। অপরদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মামলাগুলো জিইয়ে রাখা হয় এবং ১/১১’র সরকারের দায়ের করা চারটি মামলার সাথে পরে আরও ৩২টি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের করে সেগুলোকে তড়িঘড়ি করে বুলেটের গতিতে চূড়ান্ত রায়ের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এর মধ্য থেকে ২টি মিথ্যা মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ফরমায়েশি রায় দিয়ে তাঁকে ২৫ মাস অন্যায়ভাবে আটক রাখা হয়। এমনকি তাঁর জামিনের ন্যায্য অধিকারও কেড়ে নিয়ে কারাবাস দীর্ঘায়িত করা হয়।

প্রিন্স বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলন সরকার ফ্যাসিবাদী কায়দায় দমন করতে যারপরনাই চেষ্টা করেছে এবং এখনও তা অব্যাহত রেখেছে। করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরুতে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার শর্তসাপেক্ষে তাদের দেয়া ফরমায়েশি রায় স্থগিত করে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিলেও কার্যত তিনি গৃহবন্দি। সরকার প্রথম দফায় বেগম খালেদা জিয়াকে বাসায় থেকে চিকিৎসার শর্ত দিলেও পরবর্তীতে বাংলাদেশের যেকোনো হাসপাতালে চিকিৎসার শর্ত দেয়।

তিনি বলেন, আইনমন্ত্রী বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের আবেদনটি নিষ্পত্তি হয়ে গেছে এবং সেটি আবার পুনর্বিবেচনা করা যায় না। ‘শর্ত মেনে মুক্ত করা হয়েছে’ ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু সরকার নিজেই এই শর্ত সংশোধন করেছে। তাই আবার শর্ত সংশোধন কিংবা শিথিল করা যাবে না- এই বক্তব্যটি সঠিক নয়। সিআরপিসির ৪০১ ধারায় বিষয়টি উন্মুক্ত আছে। সরকার যেকোনও শর্ত পরিবর্তনের ক্ষমতা রাখে। তা একেবারেই সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে।

এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে ভয় পায়, ভয় পায় তাঁর জনপ্রিয়তা ও নেতৃত্বকে। এজন্যই তারা ফরমায়েশি রায়ের ওপর ভিত্তি করে বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে আটকে রেখে তাঁকে রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে দুরে সরিয়ে রাখতে এবং তাঁর উন্নত চিকিৎসার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তাকে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে চায়। বেগম খালেদা জিয়ার কিছু হলে তার সমস্ত দায়-দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে। ক্ষমতা জবরদখলকারী সরকারের মন্ত্রীরা রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্যে আইনের অপব্যাখ্যা দিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলসহ বিরোধী দল ও জনগণকে নেতৃত্বশূন্য করার ষড়যন্ত্র করছে, এটি জনগণ বরদাশত করবে না।’

সরকারের সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, ‘দেশে মহামারি করোনা ভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণ ঘটেছে। করোনা মোকাবিলায় এবং জনগণের জীবন রক্ষায় সরকারের ব্যর্থতার কারণে জনজীবন বিপন্ন হচ্ছে। করোনা মোকাবিলায় সরকারের ভুল পদক্ষেপ, সময়োপযোগী সঠিক সিদ্ধান্ত না নিতে পারা এবং দ্রুত টিকা এনে জনগণকে টিকার আওতায় আনতে না পারার কারণে করোনা সংক্রমণের ভয়াবহতা দেখা যাচ্ছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.