দৈনিক নবতান
জনতার সংসদ

BREAKING NEWS

ঘর পরিষ্কার না করায় বউয়ের সাথে রাগ করে ২৭ বছর বাড়িছাড়া কুড়িগ্রামের জহর উদ্দিন

0

কুড়িগ্রাম। জহর উদ্দিন। পঁয়ষট্টি ছুঁই ছুঁই এই ব্যক্তির বাড়ি কুড়িগ্রামের পৌরসভার পলাশবাড়ী এলাকায়। বেড়ে উঠেছেন সেখানেই। বিয়ে-সংসারও করেছেন কুড়িগ্রামেই। কিন্তু তার অস্তিত্ব আর আবেগের পুরোটা জুড়ে যশোরের অভয়নগরের সুন্দলী ইউনিয়ন। এর কারণ জানতে হলে ফিরতে হবে ২৭ বছর পেছনে।

১৯৯৪ সালে তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে স্ত্রী জাহেদা বেগমের সাথে মনোমালিন্য হয় জহরের। সে সময়ের ৩৬ বছরের অভিমানী জহর তাতেই ঘর ছাড়েন। রওনা দেন অজানার উদ্দেশে। ভেঙে ভেঙে একপর্যায়ে পৌঁছে যান যশোরের অভয়নগরের নওয়াপাড়া বাজারে। সেখানে নগেন্দ্রনাথ নামে এক ব্যক্তির সাথে পরিচয়। তিনি কৃষিজমিতে কাজের শর্তে জহরকে নিয়ে যান বাড়িতে। নিজের নাম পাল্টে হয়ে যান বাচ্চু মণ্ডল। সেই থেকেই তার শুরু হয় যশোর অধ্যায়।

রাগারাগির কারণ জানালেন জহর উদ্দিন ওরফে বাচ্চু মণ্ডল। বলেন, স্ত্রীকে বলেছিলাম ঘরটা পরিষ্কার করতে। সে করলো না। তারপর বললাম, তোমার মতো স্ত্রী রাস্তাঘাটে আমার অনেক আছে। তারপরও করলো না। এতে রাগারাগি করে আমি বাড়ি ছেড়ে চলে যাই।
পরিবারের লোকজন অনেক খোঁজাখুঁজি করেন জহর ওরফে বাচ্চুকে। কিন্তু কেউ খুঁজে পাননি। বয়স বেড়ে যাওয়ায় সম্প্রতি অভয়নগরের লোকজন তাকে গ্রামের বাড়ি ফিরে যেতে উদ্বুদ্ধ করেন। তাদের জোরাজুরিতেই ৩০ সেপ্টেম্বর কুড়িগ্রামে ফেরেন তিনি।

অভয়নগরের সুন্দলী ইউনিয়নের লোকজনের কাছে এককথায় সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত বাচ্চু। সনাতন ধর্মাবলম্বী অধ্যুষিত এলাকায় সৎকার থেকে শুরু করে সব ধর্মীয় কাজেই অংশ নিতেন তিনি।

সুন্দলী ইউনিয়ন ইউপি চেয়ারম্যান বিকাশ রায় কপিল বলেন, তার মধ্যস্থতায় গত ২৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় বাচ্চু মণ্ডলকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তিনি বলেন, ইউনিয়নের প্রতিটি মানুষ তাকে ভালবাসতেন। সবার সাথে তার সুসম্পর্ক ছিল। তার পরিবারের লোকের কাছে তাকে ফেরত পাঠাতে পেরে একদিকে আমাদের দুঃখ হলেও বড় আনন্দ তিনি তার পরিবার পেয়েছেন।

তবে এলাকায় ফিরলেও অভিমান কমেনি জহর উদ্দিনের। স্ত্রী জাহেদার কাছে নয়, থাকছেন ভাতিজা শফিকুলের বাড়িতে। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, ছোটবেলা থেকেই বেশ রাগী তিনি। বিয়ের কিছুদিন পর ১৯৯১ সালেও একবার মনোমালিন্যের কারণে ঘর-সংসার ছেড়ে নিরুদ্দেশ হয়েছিলেন।

জহর উদ্দিনের স্ত্রী জাহেদা বেগম বলেন, ২৭ বছর ধরে একমাত্র সন্তানকে নিয়ে ভিক্ষা করে, মানুষের বাড়িত কাজ করে সন্তানকে বড় করেছি। আশায় ছিলাম ছোয়ার বাপ ফিরে আসবে। ছোয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে অন্য কোথাও বিয়েও করিনি। মানুষটার রাগ খুব, আর বুদ্ধি কম।

Leave A Reply

Your email address will not be published.