![](https://dainiknabatan.com/wp-content/plugins/print-bangla-news/assest/img/print-news.png)
সাইফুল ইসলাম: বান্দরবান জেলা প্রতিনিধি:
পাহাড়ের ঢাল বেয়ে একের পর এক নির্মিত হচ্ছে সড়ক। আর এসব সড়ক নির্মাণে মানা হচ্ছেনা কোন নিয়মনীতি। অপরিকল্পি ও যেনতেন ভাবে এসব সড়ক নির্মাণের ফলে কয়েকটি সড়ক ছাড়া অধিকাংশ সড়কই ব্যবহারের অনুপযোগি হয়ে উঠছে। গাড়ী চলাচল করতে না পারায় ইতিমধ্যে কিছু কিছু সড়ক পরিত্যক্তও হয়ে গেছে। বান্দরবানে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ণ বোর্ডের অর্থায়ণে শতশত কোটি টাকা ব্যয়ে বিগত কয়েক বছরে নির্মিত সড়ক গুলোর এমনই চিত্র ফুটে উঠেছে।
স্থানীয়রা জানায়, বান্দরবানের মধ্যে দূর্গম পাহাড়ে নির্মিত অধিকাংশ সড়কই অপরিকল্পিত। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ইচ্ছেমত পাহাড় কেটে যেনতেন ভাবে নির্মাণের ফলে এ সড়কগুলোর অধিকাংশই রয়ে গেছে অত্যান্ত ঢালু। এসব সড়কগুলোতে গাড়ী চলাচলতো দুরের কথা, পায়ে হাটাও ঝুকিপূর্ণ। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে রাস্তায় শেওলা জমে পিচ্ছিল হয়ে পড়ে। ফলে এসব সড়কে বর্ষাকালে পায়ে হেটে চলাও হয়ে উঠে অধিক বিপজ্জনক। অনেকে পিছলা খেয়ে পড়ে গিয়ে আহত হবার ঘটনাও আছে। আবার কিছু কিছু সড়ক নির্মাণের পরপরই হয়ে গেছে পরিত্যক্ত। রাস্তার মাঝে গঁজিয়েছে গাছও। কিছু কিছু সড়ক অত্যান্ত ঢালু হওয়ায় কিছু কিছু সড়কে ফোর হুইল ড্রাইভের স্বল্প সংখ্যাক চাঁদের গাড়ী, টিএস জাতীয় ট্রাক ছাড়া চলতে পারেনা সাধারণ যানও। ফলে সরকারের প্রতিবছর শতশত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এসব অভ্যন্তরীণ সড়কের বেশিরভাগই কাজে আসছেনা দূর্গম এলাকায় বসবাসকারীদের। তারপরও থামছেনা এ ধরণের উন্নয়ণ। তারা আরো জানায়, এমন ঢালু পথে অল্প পরিমান মালামাল নিয়ে ফোর হুইল ড্রাইভের গাড়ী চলতে পারে। যার কারণে পাহাড়ের উৎপাদিত বিভিন্ন ফসলাদির পিরিবহন করে আনতে গিয়ে দাম তুলনামূলক বেশি পড়ে যায়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এত কিছুর পরও পাহাড়ে অপরিকল্পিত সড়ক নির্মাণ থেমে নেই। এগুলো পাড়াবাসীদের সুবিধার জন্য নয়, কিছু প্রভাবশালী গাছ ব্যবসায়ীর সাথে আতাত করে গাছ পাচারে সহযোগিতা করতেই এ সড়কগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে। আর এর ফলে গাছ ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে একটি বড় সুবিধা নিচ্ছে বান্দরবানের দায়িত্বরত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। এ পর্যন্ত এসব ঢালু সড়কগুলোতে গাছ পাচার করতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাচ্ছে গাছ ব্যবসায়ীরা।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, এসব অপরিকল্পিত সড়ক নির্মাণের ফলে গাছ ব্যবসায়ী থেকেও যেমন একটি বড় ধরণের সুবিধা পাচ্ছে, তেমনি কাজের ঠিকাদারদের কাছ থেকেও পাচ্ছে বড় ধরণের উৎকোচ। এসব অপরিকল্পিত সড়ক নির্মাণ করে সংশ্লিষ্ট বিভাগের বান্দরবানের কয়েকজন কর্তার অনেকেই হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। সঠিক তদন্ত না থাকায় এমন কর্মকান্ড থামছেনা বলে ধারনা বিশেষজ্ঞদের।।
সরেজমিনে, রুমার পলিকা পাড়ার প্রায় কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে ১কিলোমিটার ইট সলিংয়ের রাস্তা ও একটি ব্রিজ, রুমার দার্জিলিং পাড়া থেকে সুনসং পাড়ার প্রায় ২কিলোমিটার সড়ক, বেশ কয়েকটি কালবার্ট ও রোয়াংছড়ির কচ্ছপতলীর চিনি পাড়ার রাস্তার মুখ থেকে দেবতা খুম পর্যন্ত সড়কসহ জেলার বেশ কয়েকটি সড়ক নির্মাণের পর ব্যবহার করার আগেই চলাচলে অনুপযোগি হওয়ায় পরিত্যক্ত হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে অনেক রাস্তায় চলাচল না থাকায় গঁজিয়েছে গাছ। এছাড়া থানচি সড়কের কোরাং পাড়া এলাকা থেকে গ্যালেংগিয়া, রোয়াংছড়ির কচ্ছপতলীর রাস্তার মুখে তুলা পাড়া হতে সাধু হেডম্যান পাড়াসহ নির্মিত অনেক সড়কই ঢালু হওয়ার কারণে চলছেনা সাধারণ পরিবহন।
এ বিষয়ে রুমার পলিকা পাড়ার বাসিন্দা মংচিং মুই মারমা জানান, নির্মাণের পর পরই পলিকা পাড়ায় পাশে নির্মিত রাস্তাটি পরিত্যক্ত হয়ে গেছে। পরে এলাকাবাসীদের জন্য পাশেই এলজিইডি নতুন সড়ক নির্মাণ করেছে। বর্তমানে উন্নয়ণ বোর্ডের নির্মিত সড়কটিতে গাছ উঠে গেছে। সড়কটি অত্যান্ত ঢালু হওয়ায় এটি আর ঠিক করার কোন সুযোগ নেই। এতে সরকারের কয়েক কোটি টাকা নস্ট হয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, এ সড়কটি অকেজো হয়ে পড়ায় পাশেই এলজিইডি একটি নতুন সড়ক নির্মাণ করে পাড়াবাসীদের চলাচলের জন্য অপর প্রান্তে সংযুক্ত করেছে।
বান্দরবানের ঠিকাদার মিলন জানায়, রুমার দার্জিলিং পাড়া থেকে সুনসং পাড়া পর্যন্ত রাস্তাটি তিনি নির্মাণ করেছেন বহু কস্টে। এখানে রাস্তা হবেনা বলে জানালেও নির্বাহী প্রকৌশলীর নির্দেশে তিনি রাস্তাটি করতে বাধ্য হন। বহু কস্টে করা এ রাস্তাটি নির্মাণের পরপরই পরিত্যক্ত হয়েছে বলে জানান তিনি।
রোয়াংছড়ির সংবাদকর্মী সাথুইঅং ও থানচির সাংবাদিক অনুপম জানান, রোয়াংছড়ি ও থানচির বিভিন্ন সড়কগুলোর অবস্থা খুবই বেহাল। এসব সড়কগুলো তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানিয়েছেন তারা।
এদিকে পরিবেশের কোন ছাড়পত্র ছাড়াই বারবার অপরিকল্পিতভাবে বড় বড় পাহাড় কেটে রাস্তা নির্মাণ করলেও বান্দরবান পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কোন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেয়ায় আরো আগ্রহী হচ্ছে পাহাড় কেটে এসব অপরিকল্পিত সড়ক নির্মাণে।
বান্দরবান পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ফখর উদ্দিন বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ণ বোর্ড কখনোই উন্নয়ণের নামে কোন প্রকার পরিবেশের অনুমোদন ছাড়া পাহাড় কাটতে পারেনা। এধরণের পাহাড় কাটার অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে বারবার এ ধরণের অপরিকল্পিত রাস্তা নির্মাণের কারণ জানতে চাইলে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ণ বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা জানান, বিষয়গুলো আমরা দেখছি। সামনে বরাদ্ধ আসলে আমরা এসব সড়ক সংস্কার করবো। সবগুলো সড়কের কাজই তদন্ত করা হবে বলেও জানান তিনি।
তবে অপরিকল্পিত সড়ক নির্মাণে মাধ্যমে সরকারী অর্থ অপচয়ের কারণ জানতে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ণ বোর্ড বান্দরবান ইউনিটের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বিন মো: ইয়াছির আরাফাতকে কয়েকবার কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
সঠিক তদারকি না থাকায় সরকারের কোটি কোটি টাকা বিনস্টকারী এসব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার দাবী বান্দরবানবাসীর।