দৈনিক নবতান
জনতার সংসদ

BREAKING NEWS

বান্দরবানে শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ১ কোটি ঊনত্রিশ লক্ষ টাকা আত্মসাত করার অভিযোগ

0
সাইফুল ইসলাম: বান্দরবান জেলা প্রতিনিধি:  
বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার ইউএনডিপি United Nations Development Programme(UNDP) পরিচালিত জাতীয় করণকৃত ১৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪৩জন শিক্ষক-শিক্ষিকার নিকট থেকে ১কোটি ২৯লাখ টাকা আত্মসাত করার অভিযোগ রোয়াংছড়ি উপজেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা অফিসার মুহাম্মদ কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে।
১৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাথে কর্মরত ৫৫ জন শিক্ষককেও ২০১৭সালে জাতীয় করণের আওতায় আনা হয়। এই ৫৫জন শিক্ষকের মধ্যে থেকে ৪৩জন শিক্ষকদের নিকট প্রতিজন থেকে তিন লাখ টাকা করে বিভিন্ন সময়ে ১কোটি ২৯লাখ টাকা নেওয়ার অভিযোগ উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা (এটিইও) মুহাম্মদ কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে।
এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী ৪৩জন শিক্ষক-শিক্ষিকা শিক্ষাকর্মকর্তা কর্তৃক আত্মসাতকৃত টাকা ফেরত চেয়ে ও শিক্ষা কমকর্তা মুহাম্মদ কামাল হোসেনের অপসারণ দাবী করে অভিযোগ আকারে গত ৫জুলাই বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের বরাবরে আবেদন করেছেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষকরা আবেদনে উল্লেখ করেছেন রোয়াংছড়ি উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার
মুহাম্মদ কামাল হোসেন, এবং অফিস কর্মচারীবৃন্দ মিলে দীর্ঘ বৎসর ধরে রোয়াংছড়ি উপজেলার সহকারী শিক্ষকদের কাছ থেকে বিভিন্ন উপায়ে অবৈধ্যভাবে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
সদ্য জাতীয়করণকৃত ইউএনডিপি”র ৫৫জন শিক্ষকদের কাছ থেকে প্রাপ্য বকেয়া বেতন ভাতা বিলের বিপরীতে জন প্রতি তিন লক্ষ টাকা করে তিনি দাবী করেন, শিক্ষকরা টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তাতে তিনি শিক্ষকদেরকে চাকরীচ্যুত করাসহ বিভিন্ন ধরনের চাকরীর সমস্যা হওয়ার ভয়ভীতি প্রদর্শণের মাধ্যমে ইতোমধ্যে ৪৩ জন শিক্ষকের কাছ থেকে ইতিমধ্যে তিনি তিন লক্ষ টাকা করে মোট এক কোটি ঊনত্রিশ লক্ষ টাকা আদায় করে নিয়েছেন ।
এছাড়াও শিক্ষকদের বিভিন্ন অনলাইন তথ্য আপডেট এর জন্য সহকারী শিক্ষকদের হয়রানি করে সামান্য কাজেও জন প্রতি পাঁচশত টাকা করে নিয়ে থাকেন। শিক্ষকদের নিজের প্রোফাইল এর পাসওয়ার্ড তৈরি করার পর বা আপডেট করার পর তা শিক্ষককে না দিয়ে জিম্মি করে বার বার তার কাছে ধরনা দিতে বাধ্য করেন। সম্প্রতি আইসিটি-ইন-এডুকেশন প্রশিক্ষণ এর জন্য নিয়ম অনুযায়ী সিনিয়র শিক্ষকদের প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকে বিঘ্নিত করে ২হাজার টাকার বিনিময়ে অন্যায়ভাবে জুনিয়র শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ গ্রহণে সুযোগ দিচ্ছেন।
অন্যদিকে শিক্ষকদের বিভিন্ন ধরনের ব্যাংক ঋণ চাকুরী স্থায়ীকরণ, শ্রান্তি ও চিত্ত বিনোদন ভাতা বিল এবং সকল জাতীয় দিবসসহ সরকারী বিভিন্ন উন্নয়নের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারী বাজেট থেকে দুই তৃতীয়াংশ টাকা হারে অধিকাংশ শিক্ষককের কাছ থেকে আত্মসাৎ করে থাকেন। এভাবে দিনের পর দিন তাদের বিভিন্ন অপকর্মে রোয়াংছড়ি উপজেলার সকল শিক্ষক অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। যার দরুণ রোয়াংছড়ির উপজেলার শিক্ষকদের মানসিক চাপ কোমলমতির শিক্ষার্থীদের উপরও প্রভাবিত হচ্ছে।
তাই এমন গর্হিত ও অন্যায় কার্যকলাপ হতে পরিত্রাণের জন্য উল্লেখিত ব্যক্তিদের রোয়াংছড়ি উপজেলা হতে অনতিবিলম্বে অপসারণসহ শিক্ষকদের নিকট হতে আত্নসাৎকৃত টাকা ফেরত প্রদানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের নিকট আবেদন করেছেন।
রোয়াংছড়ি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সুত্রে জানাযায়, ২০০৭-২০০৮ সালে বিভিন্ন পাড়ায় ইউএনডিপি ১৬টি বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্টা করে এবং ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত ইউনএনডিপি পরিচালনা করে পরবর্তীতে ২০১৭ সালে উপজেলায় ইউএনডিপি পরিচালিত জামা চন্দ্র পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় ,হ্লাপাগই পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় ,থোয়াই অংগ্য পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় , বাওয়া পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্ণবাসন পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, ক্রংলাই পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়,জুটিয়া পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, দুর্নিবার পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় ,তারাছা পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় , মাসুমুই পাড়া প্রাথমিক বদ্যালয়, মেরাই প্রু পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়,ডলুঝিড়ি পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, আলেক্ষ্যং পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, ক্লোমাসাং পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়,লুং লাই পাড়া প্রাথমিক বিদ্যলয়, খাব্রে পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ১৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করন করে ও পরে ওই বিদ্যালয়ে কর্মরত ৫৫ জন শিক্ষককে জাতীয় করণ করা হয়।তবে ২০১৭-২১ সাল পর্যন্ত তাদের বেতন ভাতা বকেয়া ছিল। এই বকেয়া বেতন শিক্ষকদের পাইয়ে দিতে সহকারী শিক্ষা অফিসার মুহাম্মদ কামাল হোসেন ৪৩জন কর্মরত শিক্ষকদের এক কোটি ঊনত্রিশ লাখ টাকা আত্মসাত করেছেন।
এবিষয়ে জানতে রোয়াংছড়ি উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা (এটিইও) মুহাম্মদ কামাল হোসেনের বক্তব্য জানার জন্য তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিক বার কল করে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার ব্যবহৃত মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। রোয়াংছড়ি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
বান্দরবান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, অভিযোগকারীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শুনানী আজ(৬জুলাই) গ্রহণ করা হয়েছে, ভুক্তভোগী শিক্ষকরা অভিযোগের সব ডকুমেন্ট আনতে পারেননি। পরবর্তীতে সব ডকুমেন্ট জমা দেওয়া হলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।
বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন এর কাছে রোয়াংছড়ি উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার মুহাম্মদ কামাল হোসেনের টাকা আত্মসাত করার অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান ৫জুলাই বিকাল বেলা রোয়াংছড়ি উপজেলার ভুক্তভোগী শিক্ষকরা রোয়াংছড়ি উপজেলার সহাকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মুহাম্মদ কামাল হোসেন ও অফিস কর্মচারীদের বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ নিয়ে জেলাপরিষদ চেয়ারম্যান বরাবরে আবেদন করলে চেয়ারম্যান এর নির্দেশে প্রধান নির্বাহী কমকর্তার নেতৃত্বে, জেলা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তাদের সাথে ভুক্তভোগী শিক্ষকদের আবেদনের বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমে তথ্য যাচাই করা হয়।আলোচনায় ভুক্তভোগী শিক্ষকদের কর্তৃক অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আরো পূর্ণাঙ্গভাবে টাকা আত্মসাতের তথ্যপ্রমাণাদিসহ  আগামী ৭দিনের মধ্যে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের নিকট দাখিল করতে বলা হয়েছে এবং যদি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ  প্রমাণিত হয় তাহলে সরকারের আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে জানান তিনি। এছাড়া অন্যান্য উপজেলাগুলোতেও এব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
Leave A Reply

Your email address will not be published.