দৈনিক নবতান
জনতার সংসদ

BREAKING NEWS

নান্দাইলে দেড়-দুই হাজার কিলোমিটার গ্রামীণ সড়কের বেহাল দশার ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষ ভোগান্তি

0

 

হাফেজ শাহ্ মুহাঃ মিজানুর রহমান তালুকদার হারুন ,নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি

সংসদীয় আসন আসন ১৫৪ ময়মনসিংহ ০৯ নান্দাইল নির্বিচনী এলাকা তথা উপজেলায় গ্রামীণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন যেমন-তেমন রাস্তা ও বিদ্যুৎএর অবস্থা করুণ। নান্দাইলের ১৩টি ইউনিয়ন ও পৌরবাসির সবচেয়ে দুর্গতি ও ভোগান্তিই হলো যোগাযোগ ব্যবস্থা তারপর বিদ্যুৎ এর লোডশেডিংতো একবারে নিত্যসঙ্গী। বিগত ১০বছরে নান্দাইলের সড়ক গুলোর কাঙ্কিত উন্নয়ন না হওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ ও হতাশা।
নান্দাইল উপজেলায় ১৩ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা মিলে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ বসবাস। এখানে ১৩টি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকার অন্তত ৫শত গ্রামীণ রাস্তার ১৫০০-২০০০কিলোমিটার সড়কের বেহাল দশার ফলে ভেস্তেগেছে বর্তমান সরকারের নির্বিচনী ইসতিহার ‘গ্রাম হবে শহর’। অপরদিকে জ্বলে মিশেগেছে শতভাগ বিদ্যুৎ পৌঁছানোর সফলতা। নান্দাইলের গ্রাহকগণ শতভাগ মিটার পেলেও কারেন্ট পায় ৪০/৫০ ভাগ। এই বর্ষা মৌসুমে দীর্ঘসময় বৃষ্টিপাতের কারনে নান্দাইলের প্রত্যন্ত অঞ্চলের রাস্তাগুলোর বাস্তবচিত্র ফুটে উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ জাতীয় গণমাধ্যমে। এদিকে স্থানীয় এমপি আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিনের প্রচেষ্টায় নতুন পুরাতন মিলিয়ে দীর্ঘ দশবছরে চারশত বিশ কিলোমিটার সড়ক সংন্সকার ও উন্নয়ণ হয়েছে বলে স্থানীয় এলজিইডি অফিসসুত্রে ছোট ছোট কিছু প্রতিবেদনে দেখাযাচ্ছে।
মূলত গ্রামীণ কাঁচা সড়কগুলো চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় গণহারে ভোগান্তিতে নান্দাইলের মানুষ।
যাদেরবাড়ি কোন পাকা সড়কেরপাশে তারাই শুধু আছে একটু আরামে-আয়াশে।

নান্দাইলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও একমাত্র শিল্পাঞ্চল এবং বৃহৎ বানিজ্যিক এলাকা সর্বপূরী নান্দাইল পৌরসভা সংশ্লিষ্ট চন্ডিপাশা একটি মডেল ইউনিয়ন। বিগত দশ বছরে সবচেয়ে কম উন্নয়ন হয়েছে এই চন্ডীপাশা ইউপিতেই। এই প্রসিদ্ধ ও জনবহুল ইউনিয়নের প্রাচীন গ্রাম ধূরুয়ার ৭/৮টি রাস্তার ২০/২৫ কিলোমিটার সড়ক একবারে খারাপ। গ্রামের প্রধান সড়কটি (গাবতলী-কুরাটি পুল) পাকা করার জন্য দশবছরে এমপির দরবারে বারংবার ঘুরে, কয়েকবার এনে প্রতিশ্রুতির নেওয়ার পরও ব্যর্থ এলাকার জনগণ। স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মি ও অনলাইন এ্যক্টিভিষ্ট হাফেজ শাহ মিজান তালুকদার হারুনের পোষ্ট ও নিউজের কথা অত্র অঞ্চলের কে নাজানে, কিন্তু তারপরও কি রাস্তাটির কোন উন্নতি/অগ্রগতি হয়েছে?

তাছাড়া শিল্পনগরী বাঁশহাটি, মিশ্রীপুর, চামারুল্লাহ, বনোরাকান্দা, কুরাটি, বানাইল, ফুলবাড়িয়া, ডাংরী, কুল ধূরুয়া, ঘোষপালা, বারুইগ্রামসহ ৯ওয়ার্ডের বিভিন্ন গ্রামের অন্তত ৫০/৬০ গ্রামীণ সড়কের ৩০০ কিলোমিটার রাস্তার অবস্থা অত্যন্ত করুণ।
চলতি বর্ষা মৌসমে এসব সড়কের ছবি, ভিডিও এবং সাধারণ পোস্টে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পরিপূর্ণ। ছবি সহ শত শত কমেন্ট পড়েছে স্থানীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আবেদিন খান তুহিনের নিজ আইডির বিভিন্ন পোষ্টে। এসব পোষ্ট ও কমেন্টে সাধারণ মানুষ বিভিন্ন আবেদন নিবেদন ও চরম ভোগান্তির সাথে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখাযায়।
আবার এসব ছবি ও ভিডিও পোষ্ট ওয়ালাদেরও ট্রলকরে একদল জনবিচ্ছিন্ন সুবিধা বাদির দলে।
ওরা পোষ্ট কারিদের নাম দিয়েছে ফেসবুক সাংবাদিক।

১৩নং বীরবেতাগৈর ইউনিয়নের চৈতনখালী হতে খারুয়া পর্যন্ত রাস্তা, পলাশিয়া হতে শিবপুর বাজার পর্যন্ত, আত্নারামপুর রউফ মেম্বারের বাড়ি হতে হাসিম মেম্বারের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা ছাড়াও এই ইউনিয়নের আরও অন্তত ত্রিশটি গ্রামীণ রাস্তার শতাদিক কিলোমিটার সড়কের বেহাল অবস্থা।
মোয়াজ্জেমপুর ইউনিয়নের কালিয়াপাড়া বাজার থেকে কামালপুর ভায়া কৃষ্ণচন্দ্রপুর শিকদার বাড়ি পর্যন্ত, সেখান থেকে কুতুবপুর হয়ে সুরেশ ডাক্তারের বাড়ি পর্যন্ত বিপরীত দিকে কাদিরপুর বাগে জান্নাত মাদ্রাসা পর্যন্ত রাস্তার হাল নাজেহাল। চামটা বাজার থেকে শিমুলাটিয়া ও রামজীবনপুর রাস্তা, বাহাদুরপুর, আমোদপুরসহ ইউনিয়নে অন্তত পঁচিশটি গ্রামীণ সড়কের প্রায় শতেক কিলোমিটার সড়কের বেহাল দশা বেশ কয়েক বছর ধরে।

নান্দাইল ইউনিয়নের দাতারাটিয়া ব্রীজ থেকে পুতলাকান্দা পর্যন্ত, পালপাড়া হয়ে চনকান্দা, বৃহৎ রসূলপুর গ্রামের তিনটি ওয়ার্ডসহ ইউনিয়নের নয়টি ওয়ার্ডের ৩৫টির মতো গ্রামীণ সড়কের ২৫০ কিলোমিটার রাস্তার কোনো উন্নয়ন দীর্ঘদিনেও হয়নি বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

গাংগাইল ইউনিয়নের কমপক্ষে ৫০টির অধিক সড়কে ২০০ কিলোমিটার রাস্তাই কাঁচা । বর্ষা মৌসুমে এই ইউনিয়নের সাধারণ মানুষকে অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
খারুয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন রাস্তার ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোষ্টকরে নেটিজেনরা জানাচ্ছেন যে এলাকার মানুষ আজ গৃহবন্দী ধান ক্ষেত আর রাস্তার মধ্যে কোনো তফাত নেই।
বিভিন্ন রকমের ট্রলেপূর্ণ এসব পোষ্ট সাথে আছে ক্ষুভ ও দুঃখ দূর্দশার বিবরণী।
জনপতিনীধিদের ইঙ্গিত করে কেহ কেহ লিখেন, টিনের চশমা পড়লে তো আর কাঁচা রাস্তা দেখা যাবে না! খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের অন্তত ৫০ গ্রামীণ সড়ক কাঁচা। যা বর্ষা মৌসুম এলেই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। অনেকেই ক্ষোভে কষ্টে এসব রাস্তায় ধানের চারা রোপণকরে প্রতিবাদ করতে দেখা গেছে।

শেরপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক আহ্বায়ক শামসুল হক তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে তাদের রাস্তার ছবি পোস্টের কথা ইতিমধ্য গণমাধ্যমে এসেছে।সে লিখেন ‘চাচি মারা গেছে বাড়িতে আসতে অনেক কষ্ট হয়েছে রাস্তার বেহাল অবস্থা’। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই ইউনিয়নটিতেও অন্তত অর্ধশতাধিক কাঁচা সড়ক রয়েছে যার দৈর্ঘহবে তিন-চারশত কিলোমিটার। উন্নয়নের ছিটেফোঁটাও অনেক অঞ্চলে পড়েনি বলে অভিযোগ আছে এলাকার বাসিন্দাদের।

রাজাগাতী ইউনিয়নের স্থানীয় বাসিন্দারাও অগনিত ছবি ও ভিডিও পোষ্ট করেন এফবিত। তাদের পোষ্টে জানাযায় ইউনিয়নে ২২টি গ্রামের প্রতিটিতে তিনটি করে হলেও অন্তত ৬০-৭০ কাঁচা রাস্তা রয়েছে। বর্ষা মৌসুমে এসব রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলাও দুষ্কর। এমনও রাস্তা রয়েছে কোনো দিন এক কোদাল মাটিও পড়েনি।
সবমিলিয়ে ২৫০-৩০০ কিলোমিটার সড়কেই নাজেহাল।

উপজেলাটির পশ্চিম প্রান্তের ইউনিয়ন হলো চরবেতাগৈর ইউনিয়ন, এই ইউনিয়নটি একাধিক উপজেলার সাথে সংযুক্ত হওয়ায় ব্যবসা বাণিজ্যের দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুত্রে জানাযায় ইউনিয়নের পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ ঘেঁষা প্রায় ১০ কিলোমিটার রাস্তাসহ ছোট বড় অন্তত ৫০টি গ্রামীণ সড়কের শতেক কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে মাত্র ৫ কিলোমিটার পাকা বাকি সব রাস্তার বেহাল দশা।

উল্লেখিত ইউনিয়ন গুলো ছাড়াও, মুসল্লি, সিংরইল, আঁচারগাও, জাহাঙ্গীরপুর ইউনিয়ন গুলোতেও অসংখ্য কাঁচা রাস্তা রয়েছে। যেগুলো বর্ষা মৌসুমে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ।
এদিকে প্রথম শ্রেণীর নান্দাইল পৌরসভার রাস্তার আলোচনা করলেও লজ্জা লাগে।
এমন কোনদিন নেই যে পৌরএলাকার কোন না কোন বাসিন্দা ফেসবুকে তাদের রাস্তানিয়ে মন্তব্য করছেনা। অনেকেই আবার সরাসরি এমপি সাহেবের নজর কারতে তার পোষ্টের কমেন্টে ঢুকে দিচ্ছেন রাস্তার বাস্তব চিত্র তুলে।

অনুসন্ধানে জানাযায় নান্দাইলের ১৩ ইউনিয়ন ও পৌরসভামিলে ৫শ’ মতো কাঁচা রাস্তা রয়েছে যার দৈর্ঘযুগে ১৫০০-২০০০ কিলোমিটার হবে বলে ধারনা করাহয়। প্রত্যেকটি সড়কেই বর্ষা মৌসুমে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। নান্দাইলের গ্রামীণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও রাস্তার বেহালদশা এবং বিদ্যুৎ’র বছরব্যপি লোডশেডিং হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা মোতাবেক গ্রাম হবে শহর এই প্রক্রিয়া থেকে নান্দাইল অনেক পিছিয়ে রয়েছে।
বলতেগেলে ভেস্তেগেছে গত নির্বাচনের আওয়ামীলীগের এই নির্বাচনি ইশতেহার।

অভিযোগ আছে নান্দাইলের জন্য বরাদ্দকৃত টিআর খাবিকা প্রকল্পগুলো সঠিক ভাবে বাস্তবায়ন না হওয়ার। এমনকি কাজ না করিয়ে টাকা ফেরত দেওয়ার ঘটনাও আছে। ৪০শার কাজও সঠিকভাবে কোথাও হয়নি, যদি হতো তাহলেও গ্রামীণ রাস্তার এমন বেহাল দশা হতো না বলেই মন্তব্য জনসাধারণের।
এদিকে প্রায় সব এলাকাতেই রাস্তাগুলোতে সাময়িক চলাচলের জন্য জনসাধারণ বিভিন্নভাবে কাজ করছে।
কোথাও রাবিশ, বালুদিয়ে মেরামত করছে কোথাও সমান্ত করন ও পানি নামার লাইন করেদিচ্ছে।
তবে কোথাও এসব কাজে কোন মেম্বার-চেয়ারম্যানের লোককে কাজ করতে দেখা যায়নি।

একটাকরে ছবি দেখুন আর নিজ নিজ এলাকাসহ নান্দাইলের সামগ্রীক অবস্থান অনুধাবন করোন।
পোষ্টি/নিউজটি শেয়ার ও কপিকরে প্রচারে লেখকের পক্ষে কোন আপত্তিনেই।

Leave A Reply

Your email address will not be published.